বিদেশে উচ্চশিক্ষা: স্কলারশিপ পেতে যেসব তথ্য জানা জরুরিঃ অনেকের-ই স্বপ্ন থাকে বিদেশে গিয়ে উচ্চশিক্ষা লাভ করার। কিন্তু সঠিক গাইড লাইন কিংবা উপযুক্ত তথ্য উপাত্তের অভাবে অনেকের কাছেই সেটা সম্ভব হয়ে ওঠে না । বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য যাওয়া সত্যিই প্রশংসনীয় উদ্যোগ ।তবে সে উদ্যোগ সফল ভাবে বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন কিছু বাস্তবসম্মত ও নিখুত পরিকল্পনার । যা আপনাকে আপনার লক্ষ্যে পৌছাতে সাহায্য করবে। প্রথমেই মনে রাখতে হবে এটি একটি উদ্যোগ । আর প্রত্যেক উদ্যেগে সম্ভাবনার পাশাপাশি কিছু প্রতিবন্ধকতা ও থাকে । আর আপনাকে সে প্রতিবন্ধকতাকে কাটিয়ে উঠতে হবে। তাই প্রথমেই আপনাকে যা ভাবতে হবে তা হল, কেন আপনি উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাবেন? সেখানে কী কী সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে ? এর ইতিবাচক এবং নেকতবাচক প্রভাব গুলো কী কী ? আপনাকে কোন কোন চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতে হতে পারে ?
বিদেশে উচ্চশিক্ষা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য
বিদেশে উচ্চশিক্ষা কেন করবেন?
কেন আপনি বিদেশে পড়তে যাবেন? বিদেশে উচ্চশিক্ষা মানে আপনি একজন বিশ্ব নাগরিক ।যার মাধ্যমে আপনার ব্যক্তিগত দৃষ্টভঙ্গি প্রসারিত হওয়ার পাশাপশি বিচিত্র অভিজ্ঞতা ও দক্ষতায় নিজেকে সমৃদ্ধ করতে পারবেন। তাই নিজের কর্মক্ষেত্র প্রসারিত করতে চাইলে উচ্চশিক্ষার কোন বিকল্প নেই । নিচে তার কয়েকটি যুক্তিসঙ্গত কারণ তুলে ধরা হল।
বিদেশে উচ্চশিক্ষা/স্কলারশিপের ব্যক্তিগত উপকারিতা
(১) বিদেশে উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে আপনার আত্মসমৃদ্ধি ঘটবে । নানা মাত্রিক অভিজ্ঞতার কারণে বুদ্ধিমত্তা ও মননশীলতার দিক থেকে নতুন কিছু ভাবতে ও করতে শিখবেন । আপনি অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারবেন ,কিভাবে বৈচিত্রময় পরিস্থিত ও সংস্কৃতির সাথে নিজেকে খাপ খায়িয়ে নিতে হয় । যা আপনার কেরিয়ারের ক্ষেত্র আপনাকে আধিকতর আত্মবিশ্বসী ও কৌশলি করে গড়ে তুলবে।
(২) বিদেশে উচ্চশিক্ষার দরুন আপনার দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে এবং আপনার কর্মক্ষেত্র প্রসারিত হবে।বিশ্বের যেকোন প্রান্তে আপনি চাকুরির জন্য আবেদন করতে পারবেন এবং আপনার চাকুরি পাওয়ার সম্ভাবনাকে অনেক বাড়িয়ে তুলবে। আপনি অনেক বেশি সেলারিতে চাকুরি করতে পারবেন। তাছাড়া আপনার কর্মক্ষেত্র পরিধি হবে পুরো বিশ্ব।
(৩) আপনার কমিউনিকেশন স্কিল অনেক বৃদ্ধি পাবে। যা আপনার চাকুরি পাওয়ার ক্ষেত্রে খুব কাজে আসবে।
(৪) সর্বোপরি আপনি একটি সুন্দর এবং ফলপ্রসু জীবন উপভোগ করতে পারবেন।
বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য প্রাথমিক ধাপসমুহ:
(১) Subject choice বা বিষয় নির্বাচণ খুব-ই গুরুত্বপূর্ণ । কারণ এর উপরেই নির্ভর করবে আপনার ভবিষ্যৎ। এক্ষেত্রে আপনাকে এমন একটি বিষয় নির্বাচণ করতে হবে , যা আপনার পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বর্তমান বিশে্বর পেক্ষাপটে যার ব্যপক গুরুত্ব রয়েছে। এ ক্ষেত্রে নতুন কোন বিষয় নির্বাচণ করা ভালো। যার চাহিদা আগামী দশ কিংবা বিশ বছর পরও থাকবে।
স্কলারশিপ কিভাবে পাওয়া যায়
বিষয় নির্বাচণ বা সাবজেক্ট চয়েজের ক্ষেত্রে যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখা প্রয়োজন:
(১) ভবিষ্যতে আপনি নিজেকে কোন স্থানে দেখতে চান, এবং সে বিষয়ে আপনার যোগ্যতা কতটুকু , তার উপর বিত্তি করে বিষয় নির্বাচণ করোন।
(২) আপনার কাঙ্খিত বিষয়ে বিশ্বে গ্রহণযোগ্যতা কেমন অর্থাৎ পড়াশোনা শেষে আপনার জব সেক্টর আনুমানিক কোথায় হতে পারে।
(৩) আপনার পেছন্দের বিষয়ের উপর কোন দেশ সবচেয়ে ভালো সুযোগ সুবিধা প্রধান করে এবং তাদের শিক্ষার মান ও পাঠদান পদ্ধতি কেমন ইত্যাদি বিষয়ে ধারনা রাখতে হবে।
(৪) পড়া-শোনা শেষে আপনার কর্মক্ষেত্র কোথায় তৈরী করতে চান ? যদি আপনি বিদেশে থাকতে চান , তাহলে আপনাকে জানতে হবে সে দেশের ইমিগ্রেশন প্রসেস কেমন ? পড়াশোনা শেষে চাকুরি ও রেসিডেনশিপ পাওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু রয়েছে।
(৫) আপনার কাঙ্খিত কোর্সটির মেয়দ কত বছর ? টিউশন ফি ও আনুসাঙ্গিক খরচ সহ আপনাকে কত টাকা পরিশোধ করতে হবে? আর আপনি সেটা পরিশোধ করতে সক্ষম কি না?
আর যদি আপনি খরচ বহন করতে সক্ষম না হন। তাহলে আপনাকে দেখতে হবে সে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপ প্রোগরাম আছে কি না? থাকলে আপনি তার জন্য আপনি ইলিজেবল( যোগ্য) কি না ?
(৬) সর্বশেষ আপনি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে চান, সে বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে মোটামোটি ধারনা নিয়ে রাখা ভালো যা আপনার CV, motivation letter ইত্যাদি কাগজ পত্র তৈরীতে খুব কাজে দিবে। এ ক্ষেত্রে আপনি কাঙ্খিত বিশ্ববিদ্যালয় ওয়েব সাইটের সাহায্য নিতে পারেন । তাছাড়া অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ওয়েব সাইটে চেট বক্স রয়েছে। যার মাধ্যমে আপনি সে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সে বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে সম্যক ধারনা লাভ করতে পাবেন।
সিভি: যেখানে থাকবে আপনার জীবনবৃত্তান্ত, ভাষাগত দক্ষতা, এক্সটা কারিকোলাম একটিভেটি, অভিজ্ঞতা,হবিস ( আপনি লেখা-পড়ার পাশাপাশি কি করতে পছন্দ করেন)ইত্যাদি । যদি আপনার কোন আন্তর্জাতিক এয়াওর্ড বা রিসার্স পাবলিকেশন থেকে থাকে সেটিও তুলে ধরতে পারেন।
বিদেশে স্কলারশিপ পাওয়ার যোগ্যতা
(1) SSC, HSC অথবা তদূর্ধ্ব সনদের সত্যয়িত ফটো কপি।
২). মটিভেশন লেটারঃ যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এটিই পারে আপনার চান্স পাওয়ার সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে তুলতে। তাই একটু সময় নিয়ে যত্ন সহকারে এটি লিখুন । বিশেষভাবে যে বিষয় গুলো উল্লেখ করা প্রয়োজন তা হল,আপনি কেন এ বিষয়ে পড়তে আগ্রহী? উক্ত বিষয়কে ঘিরে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? উক্ত বিষয় পড়ার জন্য আপনি কেন তাদের বিশ্ববিদ্যালয়কেই বেচে নিলেন ইত্যাদি। তবে এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে,প্রশ্ন গুলোর পক্ষে আপনকে যথেষ্ট যুক্তিযুক্ত কারণ উপস্থাপন করতে হবে।
মোটকথা আপনি তাদের ইমপ্রেস করবেন কিভাবে করা যায় সেটা আপনাকে ভাবতে হবে। তার জন্য আপনি সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় গিয়ে একটু ঘাটাঘাটি করলেই যথেষ্ট তথ্য পেতে পারেন।যা আপনার মটিভেশন লেটারকে আরও পেশনেইট করে তুলবে।
3. Recommendations Letter /reference letter : ( যেখানে আপনার লেখা পড়া ও চারিত্রিক বিষয়ে সর্ম্পকে শিক্ষকের একটি স্টেমেন্ট বা বক্তব্য থাকবে এ মূলত ৫০০ – ৭০০ ওয়ার্ড এর মধ্যে হয়ে থাকে)
আপনি যে বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়া করেছেন সে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোন শিক্ষকের কাছ থেকে একটি রিকমেন্ডেশন লেটার লিখিয়ে নিতে পারেন । তবে যিনি আপনার সম্পর্কে ভালো জানেন, আপনার সম্পর্কে ভালো লিখতে পারবেন, তার শরণাপন্ন হওয়া ভালো।
৪). পাসপোর্টঃ যা, যেকোন দেশে যাওয়ার জন্য অত্যাশ্যক। আপনি আপনার দেশের বাহির যেকোন স্থানে যেতে চাইলে এটি আপনার প্রয়োজন পরবেই। কোন ট্রেভেলসের মাধ্যমে কিংবা নিজেই ঘরে বসে করতে পারেন অনলাইন। ফরম ফিলাপ করার পর pdf টি ডাউনলোড করোন , টাকা সহ ফরমটি ব্যাংকে জমা দিন । বাস হয়েগেল ,পরে শুধু আপনাকে পুলিশ বেরিফিকেশনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে । পুলিশ ভেরিফিকেশন হওয়ার পর পাসপোর্ট আপনার হাতে এসে পৌছাবে।
৫). ভাষাগত দক্ষতা সনদঃ আপনার নির্বাচিত দেশ বা বিশ্ববিদ্যালের শর্ত অনুযায়ী আপনার ভাষাগত দক্ষতার সনদ থাকতে হবে।ভাষাগত দক্ষতা প্রমানের জন্য IELTs,/TOEF/GRF/,SAT/,GMAT ইত্যাদি পরীক্ষা দিতে হবে। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে ভাষাগত দক্ষতার সনদ ভিন্ন ভিন্ন চাওয়া হয়। তবে আমেরিকা জন্য GRE / IELTs, আর কানাডার জন্য SAT/ GMAT এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভুক্ত যেকোন দেশের জন্য IELTs /TOEFL score অগ্রাধিকার দেয়া হয়।
IELTS কি? আইএলটিএস সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন।
৬). রিসার্স পাবলিকেশনঃ যদি আপনি রিসার্চ বেইজ মাস্টার্স কিংবা PHD করতে চান, তবে আপনার রিসার্চ দক্ষতার প্রমান সরূপ আপনার কমপক্ষে একটি আরটিকেল পাবলিশ থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখবেন, রিসার্চ পাবলিকেশন জার্নাটি যেন মান সম্মত হয়। কোন অপরিচিত জার্নাল কিংবা টাকার মাধ্যমে যে সমস্তু জার্নাল আরটিকেল পাবলিশ করে তাদের দারস্ত হওয়া যাবে না। কারণ আন্তর্জাতিক ইউনিভার্সিটি গুলোতে ইহার গ্রহণযোগ্যতা খুবই কম । তাহলে আপনার চান্স পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।
৮) ব্যাংক স্টেটমেন্টঃ এটি মূলত দাবী করে আপনি কার অর্থায়নে বিদেশে লেখাপড়া করবেন। যদি আপনি স্কালার্সিপ পেয়ে যান ! সে ক্ষেত্রে আপনাকে ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখাতে হবে না। আর যদি আপনি সেল্ফ ফান্ডে কিংবা ফেমেলি ফান্ডে যেতে চান, তাহলে অবশ্যই আপনাকে ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখাতে হবে। উল্লেখ্য যে, যদি আপনি নিজ খরচে পড়তে চান, তাহলে আপনার আর্থিক সক্ষমতার প্রমান সরুপ আপাকে ব্যাংক সালভেন্সি সার্টিফিকেট প্রদান করতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে সালভেন্সি সার্টিফিকেটের বৈধতা প্রমাণের জন্য বিগত ছয় মাসের লেনদেনের রিপোর্টর সত্যায়িত ফটোকপি পাঠাতে হয়।ব্যাংক স্টেটেমেন্টে টাকার পরিমান ৩০ লক্ষ টাকা থেকে ১ কুটি টাকা পযর্ন্ত চাওয়া হয়। তবে সেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের চাহিদার উপর নির্ভর করে।
৯) আবেদন ফিঃ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভেদে আপনাকে ৭০০-১০০০০ পর্যন্ত আবেদন ফি বা ব্যাংক ডাফ্ট পাঠাতে হবে।
১০ টি যুক্তরাজ্য স্কলারশিপ আইএলটিএস ছাড়া
বাকি ধাপ গুলো পেতে scholarsme.com সাতে থাকুন।