পরিচিতিঃ Khulna University of engineering & technology কুয়েট (খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়) খুলনার ফুলবাড়িগেট এ অবস্থিত দেশের অন্যতম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়। পূর্বে এটি বিটিআই নামে পরিচিত ছিল। তার ও পুর্বে এটি ছিল খুলনা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ নামে পরিচিত ১৯৬৭-১৯৮৬ সন অবধি। কালক্রমে এটি বিটিআই খুলনা থেকে অবশেষে কুয়েট এ নামে নামকরণ করা হয়।
কুয়েটের মনোগ্রামে এর উদ্দ্যেশ্য “প্রভু আমায় জ্ঞান দাও” লিখিত। প্রায় ১১৭.৩৫ একর জায়গা জুড়ে মনোরম পরিবেশে অবস্থিত দক্ষিন অঞ্চলের একমাত্র প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত।
KUET এর ইতিহাসঃ
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) যাত্রার শুরু হয় ১৯৬৭ সালে খুলনা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ হিসেবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। ১৯৭১ সালের যুদ্ধকালীন সময়ে কার্যক্রম স্থগিত হয়ে পড়ে। যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে এর কার্যক্রম শুরু হলে ৩ জুন ১৯৭৪ সালে এর প্রথম একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয় জাতির পিতা বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে।পরবর্তীতে এটি বাংলাদেশ টেকনোলজি ইন্সটিটিউট (বি টি আই) নাম করণ করা হয়। ২০০৩ সালে জাতীয় সংসদে কুয়েট স্থাপন আইন পাস হলে আজকের কুয়েট এর আবির্ভাব হয়।
KUET ছাত্রছাত্রী সংখ্যা:
মোট ৫৬৮২ ছাত্র ছাত্রী নিয়ে কার্যক্রম চালানো কুয়েট। এর মাঝে আন্ডার গ্র্যাজুয়েট পর্যায়ে ৪৬৩৫ জন ও পোষ্ট গ্রাজুয়েট পর্যায়ে ৯৬৭ জন।
শিক্ষক সংখ্যা:
- চ্যান্সেলর প্রেসিডেন্ট অফ বাংলাদেশ।
- ভাইস চ্যান্সেলর কাজী সাজ্জাদ হোসেন (বর্তমান)
- একাডেমিক সদস্য ৩২০
- প্রশাসনিক সদস্য ৫৫৭
কুয়েটের বিভাগ ও ইন্সটিটিউট সমূহঃ
কুয়েট এ রয়েছে ৩ টি অনুষদ ও ৩টি ইন্সটিটিউট। ৩ টি ফ্যাকাল্টির তত্বাবধানে রয়েছে ২০ টি বিভাগ।
- পুরকৌশল অনুষদ
- পুরকৌশল বিভাগ
- নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা বিভাগ
- ভবন প্রকৌশল ও নির্মাণ ব্যবস্থাপনা বিভাগ
- স্থাপত্য বিভাগ
- গণিত বিভাগ
- রসায়ন বিভাগ
- পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ
- মানবিক বিভাগ
- তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক অনুষদ
- তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক প্রকৌশল বিভাগ
- কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ
- ইলেক্ট্রনিক্স ও টেলিযোগাযোগ প্রকৌশল বিভাগ
- বায়োমেডিকেল প্রকৌশল বিভাগ
- ম্যাটেরিয়াল সায়েন্স ও প্রকৌশল বিভাগ
- যন্ত্রকৌশল অনুষদ সম্পাদনা
- যন্ত্রকৌশল বিভাগ
- শিল্প প্রকৌশল ও ব্যবস্থাপনা বিভাগ
- লেদার প্রকৌশল বিভাগ
- টেক্সটাইল প্রকৌশল বিভাগ
- শক্তি বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ
- রসায়ন প্রকৌশল বিভাগ
- তড়িৎযন্ত্র প্রকৌশল বিভাগ
ইন্সটিটিউট সমুহঃ
কুয়েটে উচ্চমানের গবেষণার জন্য তিনটি ইনস্টিটিউট আছে-
- তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট
- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউট
- পরিবেশ ও বিদ্যুৎ প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট
🌐 KUET official website
KUET Campus ক্যাম্পাসঃ
কুয়েট ক্যাম্পাস খুলনার মূল শহর থেকে কিছুটা দূরে ফুলবাড়িগেট এলাকায় অবস্থিত। খুলনা জিরো পয়েন্ট থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে অটোরিকশা সহজলভ্য।এছাড়া রেলওয়ে স্টেশন থেকে ১০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত কুয়েট ক্যাম্পাস। এছাড়া নগরের শিববাড়ী এলাকা থেকে সহজেই কুয়েটগামী বাহনে চড়া যায়।
একাডেমিক ভবন আধুনিক সুবিধা সম্পন্ন। প্রত্যেক বিভাগের একটি আলাদা চত্বর আছে। এরকম আলাদা কতগুলো চত্বর মিলে ক্যাম্পাসের মূল একাডেমিক চত্বরটি গঠিত।এছাড়া রয়েছে আধুনিক সাউন্ড সিস্টেম সম্বলিত মাল্টিমিডিয়া রুম। এ ক্যাম্পাসে এছাড়াও শিক্ষক ও কর্মচারী ক্লাব, মেডিকেল সেন্টার, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, এটিএম বুথ, পোস্ট অফিস, ব্যাংক এবং খেলার মাঠ ইত্যাদি সুবিধা আছে।এছাড়া প্রায় ৪০ টির মত প্রকৌশল গ্রন্থাগার, কেন্দ্রীয় কম্পিউটার সেন্টার,কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার রয়েছে। রয়েছে ১০০০০ সদস্য ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন মিলনায়তন, মেডিকেল সেন্টার,মুক্তমঞ্চ, ক্যাফেটেরিয়া, ১ টি জামে মসজিদ, ৩ টি হল মসজিদ এছাড়া হিন্দু ধর্মালম্বীদের উপসনালয়, হাইটেক পার্ক।
আবাসিক হলঃ
কুয়েটের আবাসিক হল মোট ৭ টি। এর মধ্যে মেয়েদের হল ১ টি বাকি ৬ টি ছেলেদের হল। হলের দায়িত্বে একজন প্রভোস্ট আর একজন সহকারী প্রভোস্ট থাকেন। হল সমূহের নামকরণ বিভিন্ন জাতীয় ব্যাক্তিবর্গের নামে নামকরন করা হয়েছে
ফজলুল হক প্রথম স্থাপিত হল, যা স্থাপিত হয় ১৯৭৪ সনে। এছাড়া আরও ৬ টি হল রয়েছে ছেলেদের। ছেলেদের হলের ক্যান্টিন, ক্যাফেটেরিয়া ও ওয়াইফাই ব্যবস্থা সম্বলিত।এছাড়া মেয়েদের একমাত্র হল রোকেয়া হলেও রয়েছে আধুনিক সুবিধা। এটি স্থাপিত হয় ২০০০ সনে।
একাডেমিক ক্যালেন্ডারঃ
স্নাতক শ্রেণীতে প্রতিটি শিক্ষাবর্ষে দুটি করে টার্ম থাকে। চার বছরের স্নাতকে মোট ৮ টি টার্ম শেষ করেই স্নাতক সম্পন্ন করে। প্রতি টার্মে ১ টি করে মিড টার্ম ও টার্ম ফাইনাল হয়ে থাকে। ১৩ সপ্তাহের ক্লাস আর ১ সপ্তাহ মিড টার্ম হয়ে থাকে। এছাড়া প্রতি শুক্রবার ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি।
পরিবহনঃ
ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সুবিধার জন্য কুয়েট খুলনা শহর ও ক্যাম্পাসের মধ্যে নিজস্ব বাস সার্ভিস পরিচালনা করে । ছুটির মধ্যে, বিশেষ সার্ভিস , ছুটির বিনোদনমূলক এবং অন্যান্য চাহিদা পূরণের জন্য বাস প্রদান করা হয় । বাস সার্ভিস পিকনিক এবং শিক্ষার্থীদের অধ্যয়ন ট্যুর জন্য পাওয়া যায় । কুয়েট এ মোট ৮ টি বাস, ২ টি পাজারো, ১ টি ও ৪ টি মাইক্রোবাস আছে।
ইন্টারনেট সুবিধাঃ
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় কম্পিউটার সেন্টারের মাধ্যমে বিভিন্ন বিভাগ ও অফিসসমূহে উচ্চগতি সম্পন্ন ইন্টারনেট সুবিধা নিশ্চিত করা হয়। এছাড়া বিভাগসমূহ ও বিভিন্ন অফিসে WiFi Router রয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীরা সুনির্দিষ্ট form fill-up করে উক্ত WiFi সুবিধা নিয়ে থাকে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ইমেইল আইডি (@stud.kuet.ac.bd) প্রদান করা হয় যা ইন্সটিটিউশনাল মেইল নামেও পরিচিত।
ভর্তি পরীক্ষাঃ
প্রতিবছর এইচ এস সি ফলাফল প্রকাশের ৩ মাসের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে প্রায় ৫ হাজার আসনের জন্যে শিক্ষার্থী নির্বাচনের জন্যে।সাম্প্রতিক সময় কুয়েট সমন্বিত প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ প্রক্রিয়ায় ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন করবে।
সমাবর্তনঃ
কুয়েট প্রথম যাত্রা শুরু করে ৩ রা জুন ১৯৭৪ এ। এরপর এট খুলনা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এ পরিবর্তিত হয়ে অবশেষে বিআইটি,খুলনা থাকাকালীন সময়ে ১ম সমাবর্তন ১৯৯৩ সালে এবং ২য় সমাবর্তন ২০০৩ সালে অনুষ্ঠিত হয়। ২০০৩ সালে বিআইটি থেকে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) এ উন্নীত হবার পরে ১ম সমাবর্তন ২০০৬ সালে, ২য় সমাবর্তন ২০১২ সালে এবং ২০১৮ সালের ৪ এপ্রিল ৩য় সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়।রাস্ট্রপতি আব্দুল হামিদের সভাপতিত্বে ৩য় সমাবর্তনে সর্বমোট ৩ হাজার ২৭২ জনকে ডিগ্রি প্রদান করা হবে। তার মধ্যে ৩ হাজার ০২৩ জনকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং, ১০৩ জনকে এমএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ,৪৮ জন এমএসসি, ৬৯ জনকে এমফিল ও ৮ জনকে পিএইচডি (এর মাঝে ২ জন ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ক) ডিগ্রির সনদ প্রদান করা হবে। একই সঙ্গে স্নাতক পর্যায়ের ভাল ফলাফলের ভিত্তিতে ‘বিশ্ববিদ্যালয় স্বর্নপদক’ দেওয়া হয় ৩৮ জন কৃতি গ্র্যাজুয়েটকে।
স্থাপত্য সমূহঃ
দুর্বার বাংলা
কুয়েটে স্থাপিত একমাত্র মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক ভাস্কর্য “দুর্বার বাংলা”। এর স্থপতি বিশিষ্ট শিল্পী গোপাল চন্দ্র পাল।
শহীদ মিনার
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের অনুরুপ শহীদ মিনার নির্মান করা হয়েছে। এটি এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে নির্মিত শহীদ মিনারগুলোর ম উন্নমুক্ত। ধ্যে ক্ষেত্রফলে সর্ববৃহৎ এবং উচ্চতায় ২য়। এই শহীদ মিনারের ক্ষেত্রফল ২২২২ বর্গমিটার এবং উচ্চতা ১১.৯৮ মিটার (কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ক্ষেত্রফল ১৫০০ বর্গমিটার এবং উচ্চতা ১৪ মিটার)। শহীদ মিনারটি শুধুমাত্র কংক্রিটে আচ্ছাদিত নয়। এর প্রতিটি ল্যান্ডস্কেপিং এ কংক্রিটের পাশাপাশি রয়েছে সবুজ ঘাস এবং ফুলের বাগান। শহীদ মিনারের ঠিক পিছন দিকটাতে রয়েছে লাল সূর্য এবং লেক যার মধ্যে শহীদ মিনারের প্রতিচ্ছবি প্রস্ফুটিত হয় যা আর অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপনায় দেখা যায়না। ২০১৮ সালে প্রায় ১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত স্থাপনার কাজ সম্পন্ন হয়। যা বর্তমানে সকলের জন্য উন্মুক্ত।