যাকাত কি? যাকাতের পরিমাণ, কাদের উপর যাকাত ফরয, যাকাত দেওয়ার নিয়ম?

যাকাত কি কাদের উপর যাকাত ফরয: আসসালামুয়ালাইকুম সুপ্রিয় ভাই ও বোনেরা পবিত্র রমজান মাস ধর্মপ্রান মুসলমানদের সিয়াম সাধনার মাস এই মাসের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ফযিলত যাকাত যাকাত ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম একটি।আজ আপনাদের সাথে আমি যাকাত সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শেয়ার করলাম।

যাকাত কি?

যাকাত ইসলামী শরীয়তের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম একটি যাকাত আদায় না করার অর্থ হলো ইসলামের একটি স্তম্ভকে ভেঙে ফেলা।

এক হাদীসে রাসূল করীম ( সা: )বর্ণনা করেছেন ” মহান আল্লাহ তায়ালা যাকে ধন সম্পদ দান করেছেন অথচ সে তার যাকাত আদায় করেনি ,কিয়ামতের দিন সে সকল ধন সম্পদ গুলোকে বিষাক্ত অজগর বানানো হবে। উক্ত অজগর ঐ ব্যাক্তির গলা জড়িয়ে ধরে তার গালে দংশন করতে থাকবে এবং বলবে আমি তোমার ধন- মাল এবং সঞ্চিত ধন সম্পদ ।

………….. (বুখারী)

অন্য এক হাদীসে বর্ণিত আছে ” যে ব্যক্তির নিকট স্বর্ণ – রৌপ্য মওজুত থাকা সত্ত্বেও সে ব্যক্তি তার যাকাত আদায় করেনি,কিয়ামতের দিন ঐ সব স্বর্ণ – রৌপ্যের দ্বারা পাত বানিয়ে তা দোযখের আগুনে দগ্ধ করে তার বুকে,পিঠে, পাঁজরে এবং কপালে দাগ দেয়া হবে। উক্ত পাঁত সমূহ একটু ঠান্ডা হয়ে গেলে তা আবার গরম করে নেয়া হবে।

যাদের উপর যাকাত দেয়া ফরয: যাকাত কখন ফরজ হয়?

যাদের উপর যাকাত দেয়া ফরয তাদের বিবরন নিচে শেয়ার করা হলো:

  • যদি কারও নিকট সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপা কিংবা সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বছরের ৪/৫ মাস থাকে এরপর ২/৩ মাস তা হতে কম থাকে ,আবার বছরের শেষ দিকে মালেকে হিসাব পূর্ণ হয় ,তবে তার যাকাত আদায় করতে হবে। তবে বছরের প্রথম ও শেষ দেখতে হবে।
  • বছরের প্রথম দিকে ও শেষ দিকে হিসাব থাকলেও মাঝখানে কিছু দিন কম থাকলেও বছরের শেষের দিকে যে পরিমাণ সম্পদ থাকবে তার যাকাত আদায় করতে হবে।
  • অবশ্যই বছরের মাঝখানে যদি সম্পুর্ন মাল নষ্ট হয়ে যায়,তবে পূর্বের হিসাব বাদ দিয়ে আবার প্রথম হতে হিসাব পূর্ণ হওয়ার সময় হিসেবে ধরতে হবে ,তথা পূর্ণপ্রাপ্তির তারিখ হতে বছর গনন শুরু করতে হবে।
  • আবার কারও এরূপ ঋণ আছে যে,সে ঋণ পরিশোধ করার পরও তার নিকট হিসাব পরিমাণ মাল কিংবা তার সমমূল্য : যেমন, সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মূল্য মওজুত থাকে ,তবে এই পরিমান যাকাত ওয়াজিব হবে।
  • কার ও নিকট কিছু স্বর্ণ ও কিছু পরিমাণ রৌপ্য আছে কিন্তু কোনটাই হিসাব পরিমাণ নেই তবে উভয়ের মূল্য মিলিয়ে যদি সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য অথবা সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণের মূল্যের সমান হয় তবে যাকাত দেয়া ফরয হবে নতুবা যাকাত দিতে হবে না। আর যদি উভয়টি হিসাব পূর্ণ থাকে ,তবে আর মূল্যে মিলানোর প্রয়োজন নেই।
  • স্বৌর্ণ – রৌপ্য ব্যাতিত সকল কিছু ধাতু যেমন: লোহা ,তামা,কাশা ,পিতল,রাং ইত্যাদি কিংবা কাপড়, চোপড় জুতা ,চীনা বরতন , কাঁচের আসবাবপত্র হুকুম হল ,যদি এগুলো ব্যবসায়ের পণ্য হয় তবে হিসাব পরিমাণ হলে এবং এক বছরকাল স্থায়ী থাকলে সেগুলোর যাকাত আদায় করতে হবে।আর ব্যবসায়ের পণ্য না হয়ে ব্যবহার্য হিসেবে ফেলে রাখলে তা যত মূল্যবান হোক না কেন এর যাকাত ফরয হবে না।

Also read: তারাবির নামাজের নিয়ম দোয়া ও মোনাজাত

যাকাতের পরিমান:

মালের কি পরিমান যাকাত আদায় করতে হবে তা শেয়ার করলাম;

ধন সম্পদ ,টাকা পয়সা ,স্বর্ণ – রৌপ্য ইত্যাদির চল্লিশ ভাগের এক ভাগ যাকাত হিসেবে ধান করতে হবে।

  • যেমন , চল্লিশ টাকায় এক টাকা ,৪০ টাকায় …১ টাকা ।
  • ৮০ টাকায় ….. ২ টাকা।
  • একশত টাকায় …… আড়াই টাকা।
  • এক হাজার টাকায় ….. পঁচিশ টাকা এই নিয়মে দিতে হবে।
  • আর যাকাত আদায় করার সময় নিয়্যত রাখতে হবে আমি এসব টাকা পয়সা মাল পত্র যাকাত হিসেবে ধান করছি। নিয়্যত না করলে যাকাত আদায় হবেনা বরং নিয়ত ছাড়া যা দান করা হয়েছে সেজন্য পৃথক ছওয়াব পাওয়া যাবে।

স্বর্ণ – রৌপ্য ও টাকার যাকাতের বয়ান:

  • যদি সাড়ে সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ হয় তবে সাড়ে সাত ভরির জন্য চল্লিশ ভাগের এক ভাগ যাকাত আদায় করতে হবে।
  • আর রৌপ্যের জন্য সাড়ে বায়ান্ন তোলা হলে চল্লিশ ভাগের এক ভাগ যাকাত আদায় করতে হবে।
  • আর যদি স্বর্ণ – রৌপ্য এ পরিমাণের চেয়ে বেশি হয় তাহলে চল্লিশ ভাগের এক ভাগ যাকাত আদায় করতে হবে।
  • যদি টাকা হয় তাহলে ঐ হিসেব অনুপাতে যাকাত আদায় করতে হবে।
  • যদি কারও নিকট এ পরিমাণ স্বর্ণ – রৌপ্য টাকা থাকে যে,পৃথক পৃথক ভাবে কোনটাই যাকাতের হিসাব পরিমাণ হয়না কিন্তু সবগুলো একত্রে হিসাব করলে দেখা যায় যাকাতের হিসাব পূর্ণ হয় তবে উক্ত বস্তুসমূহের মূল্য একত্রে হিসাব করে যাকাত দিতে হবে। এভাবে কোন দুটি বস্তূ যদি পৃথকভাবে যাকাতের হিসাব না হয় কিন্তু উহাদের দুটির মূল্য একত্রে করলে হিসাব পূর্ণ হয় , এমতাবস্থায় ও বস্তুর যাকাত দিতে হবে।

যাকাত পাওয়ার যোগ্য লোক:

পবিত্র কুরআন শরীফে সূরা তওবার ৬০ নং আয়াতে বর্ণিত আছে আট শ্রেনীর লোক যাকাত পাওয়ার যোগ্য তা নিয়ে নিচে শেয়ার করলাম বিস্তারিত:

১….. ফকির … যার সামান্য কিছু সম্পদ আছে।

২…… মিসকিন …… যার কোন কিছুই নেই।

৩…… যাকাত আদায়কারীগন যারা বায়তুলমালে জমা দেয়ার জন্য যাকাতদাতাগনের নিকট হতে যাকাত আদায় করে থাকেন।

৪…. ঋণগ্ৰস্থব্যক্তি… ঋণগ্ৰস্থব্যক্তি যদি তার ঋণ পরিশোধ করার মতো কোন ব্যবস্থা না থাকে অথবা যে সম্পদ আছে তা দিয়ে ঋণ পরিশোধ করলে তার অভাব বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

৫…… মুসাফির…. কোন লোক ভ্রমনে গিয়ে ঘটনাক্রমে তার পথ চলার মতো সম্বল নেই সে ব্যক্তি যাকাত পাওয়ার যোগ্য।

৬…. গোলাম আযাদ করার জন্য : কোন লোক গোলামীর বাঁধন হতে মুক্ত হয়ে স্বাধীনভাবে ইসলামী জীবন যাপন করার জন্য।

৭…. নও মুসলিমদেকে তাদের মন জয় করার জন্য,যাতে করে পবিত্র ইসলামের প্রতি তাদের মনের আগ্ৰহ আরো বৃদ্ধি পায়।

৮ ….. জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ , অর্থাৎ আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করার জন্য।

এছাড়াও মাদ্রাসাতে লেখাপড়া রত ছাত্র-ছাত্রীদের কিতাবপত্র কিনতে তারাও যাকাত গ্ৰহন করতে পারবেন।

যেসব খাতে যাকাত আদায় করা যাবেনা বা যাকাত দেওয়া যাবেনা:

ক) মসজিদ ,মক্তব ,মাদ্রাসা এসব প্রতিষ্ঠানসমূহ নির্মানের কাজে ।

খ) মসজিদ মক্তব ও মাদ্রাসার বিছানা পত্র খরিদ করার জন্য।

গ) রাস্তা ঘাট ও ব্রিজ নির্মাণ এর কাজে।

ঘ) মৃত ব্যক্তির কাফন দাফনের খরচের জন্য।

ঙ) মাদ্রাসার কোন কাজে ব্যয় করার জন্য।

আবার কোন মাদ্রাসায় যদি গোরাবা ফান্ড থাকে তাহলে সে ফান্ডে দেয়া জায়েয আছে।

প্রিয় পাঠক আজ আমি আপনাদের সাথে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় টি শেয়ার করলাম যাতে সবাই আমরা ইসলামী জীবন যাপন সুখের ও শান্তিতে করতে পারি কেননা যাকাত ইসলামী পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম একটি যাকাত আদায় করা ফরয যাদের উপর এই ফরয যাকাত অবশ্যই আদায় করতে হবে ।

মানুষের ধন সম্পদ টাকা পয়সা চিরদিনের জন্য নেই আজ আপনাদের অনেক আছে কাল হয়তো থাকবেনা। তাই ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক জীবন যাপন করলে আপনার শান্তি আপনার পরিবারের শান্তি গোটা সমাজের শান্তি আসবে।

যাকাত না দেওয়ার ভয়াবহতা:

যাকাত আদায় করা ঈমানের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ যাদের উপর যাকাত ফরয অবশ্যই যাকাত আদায় করবেন ভাই কেননা যাকাত আদায় না করলে আল্লাহ চাইলে আপনাকে আমাকে কারুন এর মতন অবস্থা করতে পারেন সব মহান আল্লাহর হাতে । মুসা( আঃ ) এর চাচাত ভাই কারুন ছিল প্রথমে অনেক ভালো নম্র ভদ্র কিন্তু যখন তার অনেক অনেক ধন সম্পদ হলো তখন সে মানুষের সাথে অনেক খারাপ আচরন করতে তার নম্রতা ভদ্রতা সব নিমিষেই শেষ হলো তার অহংকার তাকে অনেক নিচে নামলো আল্লাহর নির্দেশ আসলো মুসা আঃ এর নিকট যে কারুন তার যাকাত আদায় করতো কিন্তু সে দেখল যাকাত আদায় করলে তার অনেক টাকা সম্পদ চলে যাবে তাই সে যাকাত আদায় করলো না কিন্তু সেই সম্পদ এক নিমিষেই জমিন ঘ্রাস করলো । এই ঘটনার মাধ্যমে বুঝা গেল আল্লাহ চাইলে সব পারেন আজকের ধনী কোটি পতি কালকে ফকির হতে এক মিনিট ও সময় লাগবে না তাই আল্লাহর পাঁচটি স্তম্ভের নিয়ম মেনে চলুন সঠিক জীবন যাপন করার তৌফিক দান করুন আমাদেরকে মহান আল্লাহ তায়ালা ।

প্রিয় পাঠক আজ আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় টি যদি কোন ভূল থাকে তাহলে কমেন্টে জানাবেন ।

ফজরের নামাজ পড়ার নিয়ম ও ফজর নামাজ কয় রাকাত?

যোহরের নামাজ পড়ার নিয়ম | যোহরের নামাজ কয় রাকাত?

আসর নামাজ কয় রাকাত | আসরের নামাজ পড়ার নিয়ম

মাগরিবের নামাজের নিয়ম ও মাগরিবের নামাজ কয় রাকাত?

এশার নামাজ কয় রাকাত ও এশার নামাজ পড়ার নিয়ম

যাকাতের নিসাব কত টাকা ২০২৩

ধন সম্পদ ,টাকা পয়সা ,স্বর্ণ – রৌপ্য ইত্যাদির চল্লিশ ভাগের এক ভাগ যাকাত হিসেবে ধান করতে হবে। যেমন , চল্লিশ টাকায় এক টাকা ,৪০ টাকায় …১ টাকা । ৮০ টাকায় ….. ২ টাকা। একশত টাকায় …… আড়াই টাকা। এক হাজার টাকায় ….. পঁচিশ টাকা এই নিয়মে দিতে হবে।

যাকাত কাদের উপর ফরজ?

যদি কারও নিকট সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপা কিংবা সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বছরের ৪/৫ মাস থাকে এরপর ২/৩ মাস তা হতে কম থাকে ,আবার বছরের শেষ দিকে মালেকে হিসাব পূর্ণ হয় ,তবে তার যাকাত আদায় করতে হবে। তবে বছরের প্রথম ও শেষ দেখতে হবে।

shaheda

I'm a proud member of scholarsme. Content Writer and SEO Expert, I completed my graduation in Political science, and I love to share university suggestions and scholarship information.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button