মুসকান খান। হিজাব ও সাহসের মূর্ত প্রতীক। মেয়েটি মুসলমানদের মরু হৃদয়ে এক পশলা বৃষ্টির আনন্দের ন্যায় আনন্দ নিয়ে এসেছেন। কেননইবা আনন্দ দিবেন না, তিনি যে আনন্দের প্রতীক। তিনিই হাসি। মুসকান শব্দের অর্থ, অর্থাৎ মুসকান মানেই হাসি। তিনি হাসাবেন না ত কে হাসাবেন!!!
মুসকান খান এর জীবনী
মুসকান খান বিনতে মুহাম্মদ হুসাইন।তার বাবা মুহাম্মদ হুসাইন।
মুসকান খান কর্ণাটকে মান্ডি এলাকার বাসিন্দা। এই এলাকার একটি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির বাণিজ্যিক বিভাগের ছাত্রী।
কর্ণেট ও ভারতের মুসলমান।
ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য কর্ণাট। সেখানের বর্তমান পরিস্থিতি খুব নাজুক। ভারতের মুসলিম শাসকরা প্রায় ৭০০ বছর শাসন করেন। সেখানে মুসলিম রাজারা ধর্ম নিয়ে মারামারি করেন নি, করেছেন বলেও এমন কোনো নজির নেই, নেই মানে একেবারে নেই। কেউ দেখাতে পারবে না। তাদের দ্বন্দ্ব ছিল অপেক্ষাকৃত ক্ষমতাধর রাজ্যের আধিপত্য চুরমার করা। আমরা ইতিহাস পাঠকরা তাই দেখি। কিন্তু কর্ণাটের পর্দা বা হিজাব নিয়ে মুসলিম বিদ্বেষ আমরা দেখছি কোন সুশীল ও পরিস্কার চেতনা লালনকারী কেউ মেনে নিতে পারে না।
মুসকানের আল্লাহু আকবারের পূর্বকথা:
কর্ণাটে বেশকিছু দিন যাবৎ ধর্ম নিয়ে খুব একটা অস্হীর ভাব বিরাজ করছে। কর্ণাট কেনো গোটা ভারতে একই অবস্হা। মুসলিমরা সেখানে অস্হীরতায় ভুগছে। সে ত ক দিন আগের কথা সেখানে হিজাব বা পর্দা পরে ক্লাসে আসে নিষেধ করা হয়। হিজাব পরিহিত ছাত্রীদের ক্লাস রুম থেকে বের করার কথা আমরা দেখেছি। এরকম কত ভিডিও ক্লিপ ওয়ালে ভেসে যাচ্ছে। এমনকি কলেজ গেইটে তাদের আটকিয়া রাখা হয়েছে, ভিতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। সেখানে ছাত্রীরা আন্দোলন করে যাচ্ছে,তাদেকে সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের জন্য। সংবিধান অনুযায়ী ভারত একটি সেকুলার রাষ্ট্র। সে অনুযায়ী প্রত্যেকে সম-অধিকারের পাবে, সেটা আইন সিদ্ধ বিষয়। কিন্তু সংখ্যালঘু মুসলমানদের উপর নির্যাতন, বা ধর্ম পালনে এত বাধা – তারপরও সেকুলার রাষ্ট্র বলা একধরনের রশিকতা।
মুসকানের মুষ্টিবদ্ধ হাত,মুখে লিল্লাহি তাকবির:
৮ ফেব্রুয়ারি, কর্ণাটের একটি কলেজে মিছিল হচ্ছে। গেরুয়ারা লাল স্কার্ফ পরে মিছিল দিচ্ছে। ত্রিশ একাত্রিশ জন গেরুয়ার “জয়শ্রীরাম” ধ্বনি আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করে তুলেছে। কলেজের উচু উচু দালান সে ধ্বনি ফিরিয়ে দিচ্ছে, ফেরত আসা শব্দ শুনে মনে কেমন একটা কম্পন অনুভব হচ্ছে আশেপাশে। সত্যিই তাই গেইটের সামনে জড়ো হয়ে থাকা হিজাব পরিহিতা মেয়েরা ভয়ে কাপছে, তারা ভিতরে প্রবেশের প্রহর গুণছিল, কিন্তু গেরুয়াদের ভয়ে ভিতরে প্রবেশ করছে না, কি জানি কেমন হামলা করে বসে। হামলার উদাহরণ আছে। হিজাব পরিহিতা নারীকে প্রতি সেকেন্ডে হেনস্তার স্বীকার হতে হচ্ছে। তাদের উপর আটা-ময়দা ছুড়তে দেখা যায়। তাদের উপর পানি ঢেলে দেওয়া হয়। হিজাব টেনে খুলে ফেলতে আমরা দেখি, এসব ভারতের মুসলিম বোনদের নিত্তনৈমিত্তিক চিত্র ।
মুসকানের সাহস:
একজন মেয়ে স্কুটি নিয়ে প্রবেশ করলেন, পরনে কালো বেরখা, মুখ ঢাকা। স্কুটিটি পার্ক করে কোন রকম ভয় ছাড়া সামনে আসলেন, গেরুয়াদের সামনে। ভয়ংকর গেরুয়া মিছিলের সামনে। মেয়েটি মুসকান, সাহসী মুসকান খান। তিনি একাই গেরুয়াদের জয়শ্রীরাম কণ্ঠের বিরুদ্ধে মুষ্টিবদ্ধ হাত উচু করে আল্লাহু আকবার ধ্বনি দিয়ে কাপিয়ে তুলেন। মুসকানের আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে গেরুয়াদের “জয়শ্রীরাম ” ধ্বনি খেই হারিয়ে গেল। মুসকান একাই তাদের নিস্তব্ধ করে দেন। মুসকান একাই তাদের হারিয়ে দেন।
মুসকানের নিরাপত্তা :
মুসকান যখন “আল্লহু আকবার” তাকবির দেন, তখন তারা নিরাপত্তার জন্য কয়েকজন শিক্ষক এগিয়ে আসেন। তারপর সাংবাদিকরা ও মানবতাবাদী সংস্হা মুসকানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন।
মুসকানের ধ্বনি ভাইরাল।
মুসকান হয়ত জানতেন তার ধ্বনি গেরুয়ার আওয়াজে তার আওয়াজে বিলীন হয়ে যাবে। কিন্তু মুহুর্তে সারাবিশ্বে মুসকানের কণ্ঠের ধ্বনিতে মুখরিত হয় প্রতিটি মুসলিম অন্তর। মুসকানকে অনেকে আয়েশা, খাদিজা ও সুমাইয়া রা, এর সাথে তুলনা করেন, দীপ্ত ঈমানের দিক দিয়ে। মুসলিম অন্তরে সহসের বীজ বপনের কারণে। ঘুমন্ত অন্তরে নাড়া দেওয়ার জন্যে।
আসজাদ মাদানীর শুভেচ্ছা টুইট।
আসজাদ মাদানী ভারতের একজন মুসলিম প্রভাবশালী নেতা। মুসকানের স্লোগান ও সাহসী প্রদক্ষপে তিনি তাকে ধন্যবাদ জানান। ভারতের ধর্মীয় নিষেধ ও আইনের তোয়াক্কা না করে এই স্লোগানে তিনি মুসকান খান কে সাথেসাথে টুইট করে শুভেচ্ছা বার্তা জানান।
মুসকানকে পাঁচলক্ষ রুপি হাদিয়া।
জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দ” এর পক্ষ থেকে মাওলানা মাহমুদ মাদানী ৫ লক্ষ রুপি পুরুস্কার ঘোষণা করা হয়। ঘটনার পর দিনই এই ঘোষণা দেন মাহমুদ মাদানী। অনেকে এই পদক্ষেপের ভূয়সী প্রসংশা করেন।
এনডিটিভিকে সাক্ষাত দেওয়া কালে মুসকানের কিছু উক্তি।
১, বোরকা বা হিজাব মুসলমানদের একটি অংশ। একজন মুসলিম মেয়ে হিশেবে পর্দা তার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমরা বোরকা বা হিজাব মেনে চলার অধিকারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখে যাব।
২, আমার মনে কোন দুশ্চিন্তা আসে নি, আমার সাথে খারাপ কিছু করতে পারে। ঘটনার পর এনডিটিভির সক্ষাতকারে মুসকান খান।