ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বিশেষনধারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের সবচেয়ে ইতিহাস মন্ডিত বিশ্ববিদ্যালয়। জন্মলগ্ন থেকেই ইতিহাসে জড়িয়ে আছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম।আজ থেকে প্রায় ১০০ বছর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয় ১৯২১ সালে। বিশ্ব র্যাংকিং এ ৮৩৪ তম স্থান অর্জনকারী এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সূচনা হয় মূলত ব্রিটিশ ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থা অনুকরণে, যা পরবর্তীতে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে পরিচিতি পায়।ঢাকার শাহবাগে অবস্থিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপনে রয়েছে ঐতিহাসিক ভূমিকা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস: Dhaka University World Ranking
1794, Dhaka University World Ranking, সর্ব প্রথম লর্ড হার্ডিঞ্জ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দেয়। এছাড়াও নবাব স্যার সলিমুল্লাহ, এ.কে ফজলুল হক ও, সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের আবেদন জানিয়ে এসেছিলেন ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জের কাছে। ১৯১৩ সালে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয় নাথান কমিটি দ্বারা যা ছিল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিষয়ে ইতিবাচক। ১৯১৭ সালে অপর আরেকটি কমিটি গঠিত হলে তারাও ইতিবাচক রিপোর্ট প্রকাশ করে। যার ফলে ১৯২০ সালে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্দেশ্যে দ্যি ইউনিভার্সিটি এক্ট ভারতীয় আইন সভায় পাশ করা হয়। এর ই মাঝে ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের নীতিমালা গ্রহনে কিছুটা অনিশ্চয়তা দেখা দেয়, তবে সব দোলাচল কাটিয়ে অবশেষে এক্ট জারি করে ও ততকালীন বাংলার গভর্নর নবাব শামছুল হুদা কে আজীবন সদস্য ঘোষনা করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি তথ্য কমপ্লিট গাইড A to Z ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার নিয়মাবলী দেখতে ভিজিট করুন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি তথ্য
অবশেষে ১৯২১ সালের ১ জুলাই ৬০০ একর (প্রায়) জায়গা নিয়ে ৮৪৭ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু হয় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড এর। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে উল্লেখযোগ্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছেন জাতির জনক বংগবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান, এছাড়া বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ ৬ জন প্রধানমন্ত্রী, নোবেল বিজয়ী মুহম্মদ ইউনুস।
প্রায় ৬০০ একর জায়গা জুড়ে শাহবাগে অবস্থিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে ১৩ টি অনুষদ,৮৩ টি বিভাগ, ১২ টি ইন্সটিটিউট, ৭ টি অধিভুক্ত কলেজ।এছাড়া রয়েছে ২০ টি আবাসিক হল ছাত্র ছাত্রীদের, ৩ টি ছাত্রাবাস।এছাড়াও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল নিদর্শন কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার,কলা ভবন,কার্জন হল।
বিজ্ঞান বিভাগের পাঠদান সম্পন্ন হয় কার্জন হলে, সামাজিক বিজ্ঞান এর কলা ভবন এ, ব্যবসায় প্রশাসনের পাঠদান ব্যবসায় শিক্ষা ভবনে, চারুকলায় চারুকলার পাঠদান, এছাড়া আইবিএ ভবন, লেদার ইন্সটিটিউট, আইটি ইন্সটিটিউট থেকে সংশ্লিস্ট বিষয়ে পাঠদান হয়ে থাকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে টি.এস.সি, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, অপরাজেয় বাংলা,সিনেট ভবন, মধুর ক্যান্টিন, বকুল তলা
টি এস সি সবচেয়ে প্রান চঞ্চল স্থান।ছাত্র, শিক্ষক মিলনায়তন কেন্দ্রে বর্তমানে বেশ কিছু সংঘের কেন্দ্রীয় অফিস পরিচালনা করা হয়। এছাড়াও এটি সবচেয়ে প্রান চঞ্চল স্থান সমুহের মধ্যে অন্যতম।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার সবচেয়ে বিশাল গ্রন্থাগার বাংলাদেশের। প্রায় আঠারো হাজার বই নিয়ে যাত্রা শুরু করে বর্তমানে প্রায় সাত লাখ বই রয়েছে। সকাল থেকে সিরিয়াল দেওয়া থাকে গ্রন্থাগারের সামনে
এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত অপরাজেয় বাংলা স্মৃতি স্তম্ভ রয়েছে। রয়েছে মধুর ক্যান্টিন। এছাড়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ঢাকা মেডিকেল কলেজ সংলগ্ন স্থানে। রয়েছে দোয়েল চত্বর। অপরাজেয় বাংলা ছাড়াও রয়েছে রাজু ভাস্কর্য, রয়েছে স্বাধীনতার সংগ্রাম ভাস্কর্য।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান। তিনি ছাড়াও ২৮ জন উপাচার্য দায়িত্ব পালন করেছেন। রাস্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ টি হলের ৫ টি ছাত্রীদের। এছাড়া বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্যে একটি আলাদা সুবিধা সম্পন্ন আবাসিক হল রয়েছে। সকল শিক্ষার্থী কে কোন না কোন আবাসিক হলের সাথে যুক্ত থেকে শিক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ক্ষেত্রে বিভাগ ভেদে আলাদা নুন্যতম জি পি ও চাওয়া হয়।
স্নাতক ভর্তি পরীক্ষা সাধারনত বিভাগ ভেদে সেপ্টেম্বর, অক্টোবরে হয়ে থাকে। আবেদন যোগ্যতা হিসেবে ক ইউনিট তথা বিজ্ঞান বিভাগে ৮.৫০ জি পি এ চাওয়া হয়। আলাদাভাবে ৩.৫০। এছাড়া ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ খ ইউনিটে ৮, বিভাগ পরিবর্তন বা ঘ ইউনিটে ৮, মানবিক ও বানিজ্য তথা গ ইউনিটে ৮ ও চ ইউনিট তথা চারুকলা ইউনিটে ৭ চাওয়া হয়। এছাড়া বিস্তারিত তথ্য জানতে www.du.ac.bd ওয়েব সাইটে প্রবেশ করলে ভর্তি বিষয়ক সকল তথ্য পাওয়া যাবে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগঠন ,ছাত্র রাজনৈতিক দলের ভূমিকা বেশ সক্রিয়। বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধে বেশ সক্রিয় ভুমিকা রয়েছে।কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসসদ ডাকসু বেশ সক্রিয়। এটি ১৯২২-২৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এছাড়াও জাতীয়তাবাদী দল, ছাত্র ফেডারেশন, ছাত্রলীগ, ছাত্রদল এর মত রাজনৈতিক দল ছাড়াও সাংস্কৃতিক, নাট্যদল, নৃত্যদল, বিতার্কিক দল রয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়মিতভাবেই সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এই পর্যন্ত ২০১৯ সাল অবধি ৫২ টি সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সর্বোপরি প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত এই বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের একমাত্র সাধারন বিশ্ববিদ্যালয় যা হরহামেশাই আন্তর্জাতিক র্যাংকিং এ জায়গা করে নিচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদয় উন্নতি দেশ এর জন্যে ইতিবাচক।