প্রতিবেদন লেখার নিয়ম: লেখা-পড়া, চাকরি কিংবা গবেষণা সর্বক্ষেত্রে প্রচলিত একটি শব্দ প্রতিবেদন যার ইংরেজি প্রতি শব্দ হল রিপোর্ট। (Protibedon lekhar niyom) সহজ ভাষায় বলতে গেলে প্রতিবেদন হল এমন একটি নথি বা পত্র যার মাধ্যমে কোন বিষয়ে অনুসন্ধান, প্রকল্প কিংবা কোন উদ্যোগের ফলাফল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট সু্ন্দর ভাবে উপস্থাপন করা হয়। যা মূলত তিনটি কেটাগরির হতে পারে
(১) কোন অনুষ্ঠান বা আয়োজন বিষয়ে সং বাদ পত্রে প্রকাশনার জন্য, মানুষের জন জীবনের দুর্ভোগকে কেন্দ্র করে, অথবা একান্ত ব্যৗক্তিগত বা প্রতিষ্ঠানিক বিষয়ে প্রতিবেদন হতে পারে । আর যিনি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন তাকে বলা হয় প্রতিবেদক। কোন বিষয়ের উপর গভীর অনুসন্ধান।
প্রতিবেদন কেন লেখা হয়??
প্রতিবেদনের মূল উদ্দেশ্য থাকে কোন বিষয়কে সুষ্ঠ পর্যবেক্ষণ,পর্যালোচনা, গবেষণা ও বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট সুন্দর, সাবলীল, সংক্ষিপ্ত ও সহজ ভাষায় উপস্থাপন করা।যদি এক কথায় বলি তাহলে বলতে হয় ,প্রতিবেদন লিখা হয় কোন বিষয়কে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট উপস্থাপনের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর করানোর জন্য । আর এটিকে উত্তম মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যা মূলত কর্তৃপক্ষের নজর আকর্ষণের পাশাপাশি সিদ্ধান্ত গ্রহনে সহয়তা করে।
প্রতিবেদন লেখার নিয়ম এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য।
প্রতিবেদন লেখার পূর্বে যে বিষয়গুলো নজরে রাখা প্রয়োজনঃ
প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন লেখার নিয়ম হোক বা যেকোনো প্রতিবেদন লেখার জন্য নিচের বিষয় গুলো লক্ষ রাখতে হবে।
১. প্রতিবেদন লিখার সময় মাথায় রাখতে হবে আপনি কার কাছে প্রতিবেদন লিখছেন। সে অনুযায়ী অনেক ক্ষেত্রে প্রতিবেদন লিখার স্টাইল ও পরিবর্তন করা লাগতে পারে।
২. প্রতিবেদ যেন তার নির্দিষ্ট কাটামো ও নিয়মানুযায়ী হয়।
২. প্রতিবেদনের ভাষা হবে সহজ সরল ও প্রাঞ্জল
৩. প্রতিবেদন হবে পক্ষপাত দুষ্টহীন তথা নিরপেক্ষ এবং যুক্তিযুক্ত।অর্থাৎ কোন প্রকার মতাদর্শের প্রেক্ষিতে নয় যুক্তির কষ্টি পাথের নিজের অভিমত তুলে ধরতে হবে।
৪. ভষাগত কাঠামো হবে শব্দ বাহুল্য বর্জিত অর্থাৎ অপ্রয়োজনীয় শব্দ কিংবা বাক্যের ব্যবহার যথাসম্ভব এরিয়ে যেতে হবে।
৫. বিষয়কে যত জঠিল হোক না কেন , সেটাকে সহজ ভাবে উপস্থাপন করা চেষ্ট করতে হবে যাতে সেটি সহজেই পাঠকের বোধগম্য হয়।
৬. বাক্যে বিরাম চিহ্নের যথাযথ ব্যবহার করতে হবে।
প্রতিবেদন লেখার নিয়ম:
এস এস সি, এইচ, এস সি, বাংলা ২য় পত্রের প্রশ্নে প্রায়ই আসে প্রতিবেদন লেখার নিয়ম।
- ১. প্রথমের দেখতে হবে প্রতিবেদনটি কিসের উপর লিখতে হবে। মূলত তার উপর নির্ভর করে লেখার স্টাইল ঠিক করতে হবে। প্রথমেই মাথার মধ্যে একটা চক একে নিন কোন কাঠামোতে আপনি প্রতিবেদনটি লিখবেন। আসলে সকল প্রতিবেদনের ফর্মেট এক হয় না
- ২. পরীক্ষায় সাধারণত নির্দিষ্ট কিছু প্যাটার্নে প্রতিবেদন আসে
সংবাদপত্র প্রকাশের জন্য প্রতিবেদন লিখতে বলে, কোন কিছুর আয়োজন কিংবা অনুষ্ঠান উদযাপন সম্পর্কিত বিবৃতি,নিমন্ত্রণ ইত্যাদি প্রকাশ করা। তা ছাড়া মানুষের জনজীবন সম্পর্কৃত যেমন প্রকৃতিক দুর্যোগ, সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ সম্পর্কিত প্রতিবেদন ও লিখতে বলা হয়।
আবেদন পত্র লিখার নিয়ম: Abedon potro lekhar niyom
সাংবাদিক প্রতিবেদন লেখার নিয়ম:
সংবাদপত্রে প্রকাশের জন্য প্রতিবেদন লিখার নিয়মঃ
সাংবাদিক প্রতিবেদন লেখার নিয়ম: প্রথমে একদম ওপরে প্রতিবেদনের শিরোনাম লিখতে হবে।
দ্বিতীয় লাইনে প্রতিবেদকের নাম,কিংবা পদবী তবে পদবী ব্যবহার বেশি মানাসই।পরে স্থানের নাম ও তারিখ ব্যবহার করতে হয়। এর পরে আসবে মূল বক্তব্য চার থেকে পাঁচ লাইনে। পরে বিষয় নিয়ে বিস্তরিত আলোচনা ও পর্যালোচনা।
প্রশ্নে জনজীবনের দুর্ভোগ সম্পর্কিত প্রতিবেদন একটু বেশি আসে।যেমন বল হতে পারে, ইভটিজিং প্রতিরোধে সামাজের ভুমিকা বা সড়ক দূর্ঘটনা রোধে পদক্ষেপ, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস , বন্যা, খাদ্য ভেজাল,শিশুশ্রম, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ইত্যাদি বিষয়ে মানুষের দুর্ভোগের সমাধান চেয়ে প্রতিবেদন চাইতে পারে।
প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন প্রধান শিক্ষক কিংবা অধ্যক্ষর বরাবর লিখতে বলা হয়। যেমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও প্রতিযোগিতা মুলক অনুষ্ঠানের আয়োজন নিয়ে।, কোন কবি কিংবা সহিত্যিকের শোক দিবস উদযাপন,বইনমেলা, পাঠাগার, বিজ্ঞান প্রতিযোগিতাতা, বই বিতরন অনুষ্ঠান ইত্যাদি বিষয় প্রতিবেদন লিখতে বল হয়।
এক্ষেত্রে শিরোনাম উল্লেখ করে উদযাপনের নির্দিষ্ট তারিখ উল্লেখ করে দরখাস্তের ন্যায় প্রধান শিক্ষক/ অধ্যক্ষ কাছে লিখতে হয়।
শেষে পেরক ও পাপক ঠিকা তারিখ থাকবে তবে তার জন্য বক্স আঁকতে হবে না।
প্রতিবেদন কি কি থাকতে হবে?
প্রতিবেদন লেখার শুরুতেই থাকতে হবে প্রতিবেদনের শিরোনাম,প্রতিবেদকের নাম বা উপাধি, তারিখ এবং আপনি কি উদ্দেশ্য প্রতিবেদন লিখছেন সেটি।
নির্বাহী সারাংশ: পুরো প্রতিবেদনের একটি সামারি দিতে পারে ২০-৩০ ওয়ার্ডের মধ্যে।দিতে পারেন।
ভুমিকা: ভুমিকায় প্রতিবেদনের পটভুমি কী? কী কী অন্তর্ভুক্ত করা উচিত বিষয় অনুযায়ী চিন্তা করা।
প্রতিবেদনের মূল অংশ বা বডিঃ এখানে থাকবে প্রতববেদন সম্পর্কিত বিস্তারিত বর্ণনা এটি হবে আপনার প্রতিবেদনের দীর্ঘতম অংশ। এখানে উঠে আসবে মূল বিষয় সমস্যা ও সমাধান।বর্তমান পরিস্থিতি /সমস্যার বর্ণনা।
সারাংশঃ আপনার প্রতিবেদনের কারণ, উপসংহার, সমস্যা কার্যকরী সমাধান সম্পর্কে জোরালো যুক্তি দিয়ে সংক্ষিপ্ত উপস্থাপন।
সুপারিশ বা আবেদন: চাইলে এটিকে মূল অংশের আগও লিখতে পারেন। কর্তৃপক্ষের নিকট সুপারিশ। তবে মার্জিত ও বিনয়ী ভাষার ব্যবহার কাম্য।
পরিশেষে গ্রন্থপঞ্জিকা,চিত্র, প্রশ্ন ইত্যাদি তুলে ধরতে পারেন।
প্রতিবেদন লেখার টিপসঃ
রিপোর্ট বা প্রতিবেদন লেখার এই টিপসগুলো লেখার ক্ষেত্রে আপনাকে অনেক সহায়তা করবে। আপনার সময় অপচয় রোধ করবে।আপনি যা লিখছেন তা প্রশ্নের আলেকে প্রাসঙ্গিক কি না সহজে বুঝতে পারবেন।
১. বিষয়বস্তুর সারাংশ ও সারণি প্রতিবেদনের একবারে শেষে লিখুন। আপনি যা লিখতে চাচ্ছেন তার একটা সংক্ষিপ্ত সামারি খাতায় লিখুন ।
২. মূল বিষয়ের উপড় জোর দিতে হবে। প্রথমে আপনার প্রতিবেদনের বিষয়টি ভালোভাবে বুঝোন। যে বিষয় মুল ফোকাস পয়েন্টে সে বিষয়ে একটু বেশি জোর দিন। শিরোনামের দিকে নজর দিন যাতে অপ্রাংঙ্গিক বিষয় চলে না আসে।
৩. লেখার শুরোতে পরিকল্পনা করোন। কারন সব কিছুর মুলেই রয়েছে পরিকল্পনা। আপনার সমুস্ত গবেষণা এবং উক্ত বিষয় সম্পর্কে প্রাসঙ্গিক তথ্য সংগ্রহ ও সংযোজন করোন।
৪. একটি পরিস্কার লে আওট ব্যবহার করোন যাতে করে আপনার প্রতিবেদনটি আকর্ষণীয় ও আমান্ত্রনমুলক হয় আর এটি তৈরি করতে সাহায্য করবে আপনার শিরোনাম ও উপশিরোনাম ইত্যাদি।
৫. সহজ ভাষা এবং সহজ বাক্য ব্যবহার করোন। যাতে করে সহজবোধ্য হয়।
৬. বডি অংশে থাকবে বর্ণনা তার পরে পর্যালোচনা এবং সব শেষে থাকবে পর্যবেক্ষণ।
একটি সুন্দর প্রতিবেদনের বৈশিষ্ট্য
ক) কাঠামো :প্রতিবেদনের থাকবে সুনির্দিষ্ট কাঠামো যেমন শিরোনাম, প্রতিবেদকের নাম, প্রাপকের নাম-ঠিকানা, সুচিপত্র ,বিষয়বস্তু।
খ) সঠিক তথ্য উপস্থাপন: তথ্যবহুল অনুসন্ধান মূলক। অনুসন্ধানকৃত সঠিক তথ্য উপস্থাপন।
গ) নির্ভোলতা: প্রতিবেদন হবে নির্ভোল ,বানান এবং যতি চিহ্নের ক্ষেত্রে
ঘ) ভাষা হবে সহজ সরল: ভাষা হবে সহজ সরল প্রাঞ্জল। বক্তব্য হবে সুস্পিষ্ট
ঙ) সংক্ষিপ্ত: প্রতিবেদনে তথ্যের সার সংক্ষেপ থাকবে। অপ্রয়োজনীয় শব্দ কিংবা বক্তব্য থাকবে না:
চ) উপস্থাপনা: উপস্থাপনা হবে সুন্দর ও আকর্ষণীয় যা পাঠকের বিরক্তি না আসে।
ছ) সুপারিম: প্রতিবেদনের শেষে সংযোজিত হবে সুপারিশ।
প্রতিবেদন লিখার সময় এই সব বিষয় গুলো লক্ষ্য রাখবেন?
প্রতিবেদন লিখার ক্ষেত্রে অবশ্যই তারিখ “বাংলায় লিখবে ১৬-০৯-২০২২ (ইংরেজিতে তারিখ লিখবেন না)
প্রতিবেদনে স্কুলের নামের ক্ষেত্রে “কখগ” লিখবে না, যেকোনো একটা স্কুলের নাম লিখা, নিজের স্কুলের ও লিখতে পারবে।
নিজের নাম লিখার ক্ষেত্রেও ক/X এসব লিখবে না, যেকোনো নাম/নিজের নাম সম্পুর্ণ লিখা।
যেমন : রহিম শুধু লিখবেন না, মোহাম্মদ রহিম এভাবে লিখবেন না।
অনুচ্ছেদে লিখার সময় ছড়া,উক্তি, প্রচলিত গান ব্যবহার লিখার মান বাড়ায়। তাই এসব নীল কালীর মাধ্যমে লিখবে।
যেমন: বৈশাখ নিয়ে গান,”এসো হে বৈশাখ, এসো এসো”
প্রতিবেদন লিখার নিয়ম দুরকম, যেকোনো একটা অনুসরণ করবে,কখন দুটাকেই একসাথে মিক্স করে ফেলবে না।
প্রতিবেদনের বিষয়ের ওপর নির্ভর করে কারণ, চার্ট,প্রতিকার,কারণ, প্রতিরোধ, বিখ্যাতজনেরা প্রতিবেদনের বিষয়ে কি বলছে,উক্তি এসব নীল কালি দিয়ে লিখা, আলাদা পয়েন্ট করে লিখা। পয়েন্টের টাইটেলে নীল কালি ব্যবহার করা।
বর্তমান বাজারের দ্রব্যমূল্য নিয়ে প্রতিবেদন আসলে অবশ্যই একটা চার্টে একমাস আগের এবং বর্তমান বাজারের মূল্য বৃদ্ধি দেখাবে।
কোনো কিছুর ১০০% নিশ্চিত না হয়ে পার্সেন্টেজ না দেয়া ।
আশা করি এই সব বিষয় গুলো লক্ষ্য রেখে প্রতিবেদন লিখবেন সম্পূর্ণ মার্ক পেয়ে যাবেন।