আপনি যদি ইসলামকে বা ইসলামের অনুশাসনকে মনের গভীর থেকেে অনুভব করতে চান তাহলে তারিক জামিলের বয়ান শুনুন ।
বাস্তবেই তাই, তার বয়ান হৃদয়ে ভবাবেগ জাগায়।তার কথার মূর্ছনায় হৃদয়ে বাজে প্রশান্তির সুর।জাগিয়ে তুলে অনুতপ্ত অত্ম, হৃদয়ে বাজে অনুতপ্ত হওয়ার স্পন্দন, হৃদয়কে আল্লাহর জন্য প্রস্তুত করতে,ইস্পাত কঠিন অন্তর গলাতে, ফিরে আসতে জান্নাতের রথে তাঁর লেকচারের জুড়ি নেই।
তার বয়ান শুনে লক্ষ লক্ষ মনুষের রন্ধ্রে রন্ধ্রে শিহরণ জাগে, আত্মভোলা বান্দা জাগিয়ে তুলে মহান রবের সান্নিধ্যের জন্য। অনেকে আবার অনুতপ্ত হয়ে ফুপিঁয়ে ফুপিয়ে কাঁদেন, হৃদয়ের গহীন থেকে গহীনে আল্লাহর ভালাবাসার সুপ্ত বীজ জেগে উঠে।
Maulana Tariq Jameel তারিক জামিল, শরিরীক চিকিৎসক থেকে রুহানি চিকিৎসক.
জন্ম
মাওলানা তারেক জামিলের নাম শুনেন নাই এরকম মানুষ খুবিই কম হবেন। তিনি একজন আইডল। বিশেষভাবে দ্বীনে ফেরা জেনারাল লাইনে পড়ুয়া ভাই-বোনের জন্য তিনি রোল মডেল।
গোটা বিশ্বে জনপ্রিয় বরেণ্য ও সর্বমহল সমাদৃত এ দায়ীর জন্ম ১৯৫৩ সালে পাকিস্তানের পাঞ্জাব শহরে।
প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষার হাতেখড়ি
তারিক জামিল ছিলের ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান।সোনার চামুচে মুখ দিয়ে তার বেড়া উঠা। ছোট বেলা থেকে তিনি প্রখড় মেধাবী ছিলেন। বিজ্ঞ পিতা মাতা সেটা আচঁ করতে ভুল করেন নি। আট-দশটা পিতামাতার মতন তাদেরও স্বপ্ন ছিল তাদের সন্তানকে ডাক্তার বানাবেন। তারিক জামিলের ক্ষেত্রে এমন স্বপ্নদেখা বেখাপ্পার কিছুই ছিল না।তার ছোটোবেলা থেকে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের হাতছানি দিচ্ছিল।
- তারিক জামিল সেন্ট্রাল মডেল স্কুল, লাহোর থেকে প্রথমিক স্হরের শিক্ষা লাভ করেন।
- তারপর তিনি লাহোরের সরকারী কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।
- তিনি ইসলামি শিক্ষা লাভ করেন জামেয়া আরব, রায়উইন্ড থেকে । সেখানে তিনি কুরআন, হাদীস, সুফিবাদ, যুক্তি এবং ইসলামী আইনশাস্ত্র নিয়ে অধ্যয়ন করেন।
- করাচী মিডেকেল ও ডেন্টাল কলেজ থেকে তিনি এমবিবিএস ও এফসিএস শেষ করেন।
Maulana Tariq Jameel তারিক জামিল শারিরীক ডাক্তার থেকে রুহানী ডাক্তার
মাওলানা তারিক জামিল হার্ট সার্জন হিশেবে বেশ জনপ্রিয়তা পিয়েছিলেন।কিন্তু কিভাবে তিনি হার্ট সার্জেন থেকে রুহানি ডাক্তার হলেন, কিভাবে তিনি অস্রপ্রাচার করা থেকে কুরআন সুন্নাহ দিয়ে মানুষের হার্ট সার্জারিতে ফিরে আসেন?
সেটা সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং টপিক। শুনুন তাহলে,
তখন তারিক জামিল (tariq jameel) সাহেব কেবল করাচী মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র।কলেজে বাংলাদেশ থেকে কিছু লোক দীণের দেওয়াত নিয়ে যায়।এসব দায়ী সারা বিশ্বজুড়ে তাবলীগ জামাত নামে বেশ বিখ্যাত। জামাতের দায়ীরা তাদের ক্যাম্পাসের ছাত্রদেরকে বয়ান শুনার জন্য আহ্বান জানায়।ছাত্রারা তাদের ডাকেও সাড়া দেন।তাদের মধ্যে তারিক জামিলও ছিলেন।
কিন্তু তিনি কারো বয়ান শুনে অনুপ্রাণিত হন নি। তাঁর জীবনের মুড় ঘুরে নি কোনো স্কলারের সান্নিধ্যে এসে।বরং পাল্টে তাবলীগ সাথী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. নাঈমের নামাজ দেখে।তাঁর নামাজ দেখে তারিক জামিলের চেতনা বদলে গেল।তিনি চরম ধাক্কা খেলেন।ভাবলেন, মানুষ এতো সুন্দর করে তাঁর রবের প্রার্থনা করতে পারে। এতটুকুই তাকে নিয়ে আসে বিশ্বের প্রতিপালকের সান্নিধ্যে।
ফাইনাল পরিক্ষার পরে চলে গেলেন সিল্লায়।সিল্লা থেকে ফিরে এসে মমতাময়ী মাকে জানালেন তার পরিবর্তনের কথা,সাথে এও জানালেন,
আম্মা তোমার ছেলে শুধু শারিরীক ডাক্তার হবে না, উম্মতের রুহানি ডাক্তারও হবে।
কিন্তু পরিবারের মানুষ রাজি হন নাই,তাই বলে তিনিও দমে যান নাই।পরিবারের অমতে ভর্তি হলেন মাদরাসায়।তাঁর জীবনের আমূল পরিবর্তন হয় হাজি আব্দুল ওয়াহাবের সহবতে।তারপর দাওরা হাদিস পাস করেন, তারপর ইফতা।
বাবার কঠোরতা
তারিক জামিলের বাবার স্বপ্ন ছিল তাঁর ছেলে ডাক্তার হবে,সমাজের একজন সম্মানিত ব্যক্তি হবে, কড়ি কড়ি অর্থ কামাবে, বাড়ি হবে, গাড়ি হবে ।কিন্তু তিনি তাঁর বাবার স্বপ্নে জল ঠেলে দেন।তারিক জামিল বাবাকে জানান যে, আমি আলেম হব, মুসলিম উম্মাহর জন্য কাজ করব।
কিন্তু সে সময় আলেমদের তেমন নাম-দাম ছিল না।সামাজের নিম্ন শ্রেণির লোক ছিল আলেমরা।আলেমদের আর্থিক টানাপোড়েনের মধ্যে দিনাতিপাত করতেন। সে কারণেই উনার বাবা তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠেন।তারেক জামিল কে লক্ষ্যকরে বলেন,
হয় ডক্তার হবে,না হয় বাড়ি থেকে বের হয়ে যাও।
তারিক জামিল নিজেই বলেন,
আমি দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে মাদরাসার উদ্দেশ্য বের হয়ে যাব, এমন সময় মা পিছন থেকে ডাকলেন। আমার হাতে ২৯০০ রুপি গুঁজে দিলেন।
তারপর সেখানে তিনি ৮/৯ বছর লেখাপড়া করেন।দুই বছরের মাথায় উনার বাবার সাথে আবার সুসম্পর্ক হয়।
বদলে যাওয়া তারিক জামিলের পরশে আরো বদল
মাওলানা তারিক জামিল ইফতা শেষ করার বদলে যান, বদলে যায় তাঁর জীবন,বদলে যায় কর্মস্হল। তিনি নেমে পড়েন দাওয়াতের ময়দানে।মর্মস্পর্শী বয়ান, দরদমাখা কণ্ঠে ডাকতে থাকেন পথভোলা উম্মাহকে। তিনি যে শুধু অমুসলিমকে মুসলিম করেছেন শুধু তাই,বরং আত্মভোলা মুসলমানদেরকে খাঁটি আল্লাহ প্রেমী বানিয়েছেন।৷ তাদের মধ্যে হলেন,,
- বিখ্যাত গায়ক জুনায়েদ জামশেদ
- ক্রিকেটার ইমজামামুল হক
- সাকলাইন মুশতাক,
- মুশতাক আহমদ,
- সাঈদ আনওয়ার।
সহ অনেকে ব্যক্তিগত জীবনে ইসলামকে প্র্যাক্টিস করতে শুরু করেন।এমন কি তাঁর প্রচেষ্টায় পাকিস্তান জতীয় ক্রিকেট দলের আরেক তারকা খেলোয়ার ইউসুফ উহান্না মুহাম্মাদ ইউসুফ হয়ে যান।।
এ গুলো হল বিখ্যাত ব্যাক্তিত্বের দ্বীণে ফেরার কিছু খণ্ডাংশ মাত্র।এছাড়াও তাঁর পাকিস্তানের বাহিরেও বিশ্ব খ্যাত তারকাদের সাথে সখ্যতা ছিল।একবার মক্কায় হজে তিনি ভারতীয় তারকা অভিনেতা ইমরান খানের সাথে সাক্ষাৎ করেন। তিনি তাকে দ্বীনের দাওয়াত দেন ।
জাকির নায়েকে পক্ষ অবলম্বন
জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে জঙ্গীবাদের অপবাদে সারা বিশ্বে রমরমা অবস্হা,তখন মাওলানা তারিক জামিল তাঁর পক্ষাবলম্বন করেন।তিনি বলেন, আমরা গত কয়েক বছর ধরে জাকির নায়েকের বক্তব্য শুনে আসছি,তার বক্তব্যে সহিংসতার কিছু পাইনি। তিনি সত্যের পক্ষে,আর আমরা তার পক্ষে।
কর্মজীবনঃ
তারিক জামিল দায়ী হিসেবে বেশ পরিচিত। তিনি দেওবন্দ ধারার একজন উঁচু মাপের আলেম।তিনি সাড়া বিশ্ব চষে বেড়ান, ইসলামের বাণী মানুষের কাছে পৌছে দেন। তিনি তাসাউফ পণ্হায়ও কাজ করে থাকেন।
তারিক জামিল আন্তর্জাতিকভাবে খুতবা দিয়ে থাকেন । তিনি তাঁর খুতবাগুলিতে আত্মশুদ্ধি, সহিংসতা এড়ানো, আল্লাহর আদেশ পালন,রাসুলুল্লাহ সা. এর সুন্নত পালনে উৎসাহিত করেন।
তারিক জামিল তাবলিগ জামাতের সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়িত।তিনি তাবলিগ জামাতের সদস্য।এছাড়াও তিনি পাকিস্তানের ফয়সালাবাদের একটি মাদরাসার পরিচালক।
তিনি ২০১৩,২০১৪ সালে জর্দানের রয়্যাল আল বয়াত ইনস্টিটিট ফর ইসলামিক থট কর্তৃক বিশ্বের ৫০০ জন প্রভাবশালী মুসলমানদের মধ্যে একজন হিসাবে নির্বাচিত হন।
তারিক জামিলের জীবন বদলে দেওয়া কিছু উক্তিঃ
তারিক জামিল সারা বিশ্বে দীনের দায়ী হিসেবে কাজ করছেন।তিনি বিশ্বের বিভিন্ন পান্তে লেকচার দিয়ে থাকেন।এ লেকচার মধ্যে কিছু কিছু কথা এমন থাকে যার ভাবার্থ সাগরের মতন গভীর,পাহাড়ের মতন উচু,আকাশের মতন বিশাল। আমরা হৃদয়কাড়া কয়েকটি উক্তি তুলা ধরলাম;
- মানুষের সাথে সামান্য মনোমালিন্য হলে মানুষ আপনাকে ছেড়ে চলে যায়, আর আল্লাহ আপনার সামান্য ইবাদতে রাজি হয়ে যান।
- যখন কোনো কিছু করতে না পার কান্না করে নিও,কারণ আল্লাহ সব কিছু জানেন।
- জীবন সহজ নয়,জীবনকে সহজ বানিয়ে নিতে হয়, কখনো দোয়া করে,কখনো সবর করে,কখনো বা এড়িয়ে চলে।
- কখনে কারো মনে দুঃখ দিও না,কারণ সে যদি সহ্য করে আল্লাহর উপর ছেড়ে দেয়,তাহলে তার পরিণতি ভয়ানক হবে।
- ইমানের কঠিন অধ্যায় হলো আখলাক,উত্তম আখলাক গঠন করা অনেক অনেক কঠিন।
- অন্যের মনে কষ্ট দিয়ে সালাতের সিজনায় জন্নাত তালাশ করা ছেড়ে দেন।
- আজকালতো বিয়ে বাড়িতে একটা কুকুরকেও খুশিতে রাখা হয়, কিন্তু আবহেলায় রাখা হয় রাসুলুল্লাহ এর সুন্নতকে।
- আমার রবের কসম তুমি চুপ থাকে দুনিয়া তুমার কাছে দাড়াবে।
তারিক জামিলের রচনাবলি
তারিক জামিল লেকচার দেওয়ার পাশাপাশি লেখালেখিও করেন।তিনি উর্দু ভাষায় অনেক অনেক কিতাব রচনা করেছে। নিচে কয়েকটি উল্লেখ করা হল ;
- কে সে জন।
- চোখে দেখা কবরের আযাব
- জান্নাতি নারীর গুনাবলি
- এসো তাওবা করি
- জান্নাতি হুর কেমন হবে?
- আল্লাহর সাথে বান্দার বন্ধুত্ব
- আল্লাহকে আপন করে নিন।
- আল্লাহকে যদি পেতে চান।
- আল্লাহর পরিচয়
- জান্নাত জাহান্নামের রুপরেখা।
- বেহেশতি নারী
- দুনিয়া ও আখিরাত
- যখন আসবে মূত্যুর ডাক।
- কামিয়াবীর পথ।
- মহিলাদের নাজাতের উপায়।
- হৃদয় কাঁপানো বয়ান।
- তাবলীগ জামাতে ইতিহা, ঐতিহ্য ও অবদান
সম্মাননা
২০২০ সালে পাকিস্তান সরকার থাকে Pride of Performance সম্মননায় ভূষিত করে।
তিনি national literary award প্রেসিডেন্টের উপস্থিতি লাভ করে।
তারিক জামিল বিশ্বের The 500 Muslims এর একজন হিসেবে কয়েকবার নির্বাচিত হন।
তারিক জামিল এখন ৬৭ বছর বয়েসে পদার্পণ করেছেন।এই বয়সেও হৃদয়স্পর্শী ভাষায় তিনি আজো মানুস ডাকছেন রবের দিকে।আল্লাহ তায়ালা তার ছায়াকে আমাদের মাথার উপর আরো প্রলম্বিত করুক।আর উনার খেদমতকে কবুল করুক।
কৃতিত্বে: মাহমুদুল হাসান মারওয়ান।