সমাস বাংলা ব্যাকরণ প্রত্যেক শিক্ষার্থী তথা নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য: সমাস ব্যাকরণের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কেননা বাংলা ব্যাকরণ ভালো করে জানা না থাকলে কখনো বাংলা ভালো করে জানতে তথা পরীক্ষা ভালো হবেনা তাই বাংলা ব্যাকরণের প্রতিটি বিষয় যেমন- পদ,শব্দ, সন্ধি, লিঙ্গ,সমাস উপসর্গ জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সমাস বাংলা ব্যাকরণ:
সংস্কৃত শব্দ থেকে সমাস শব্দটি এসেছে। সমাসের আভিধানিক অর্থ একত্রে অবস্থান।
সমাস কাকে বলে?
সমাসের সংজ্ঞা: পরস্পর অর্থ সংগতিপূর্ণ দুই বা ততোধিক পদ মিলে এক পদ হওয়াকে সমাস বলে।
- তবে মনে রাখতে হবে যে কয়টি পদ মিলে সমাস হয় তাদের প্রত্যেকটিকে সমস্যামান পদ বলে ।
- আর সমাস সাধিত পথটিকে সমাসবদ্ধ পদ বলে।
- যে বাক্যাংশ থেকে সমাসবদ্ধ পদ তৈরি হয় তাকে ব্যাসবাক্য বলা হয়।
উদাহরণ :
- সিংহ চিহ্নিত আসন = সিংহাসন এখানে
- সিংহ চিহ্নিত আসন হচ্ছে ব্যাসবাক্য
- সিংহাসন হচ্ছে সমস্তপদ বা সমাসবদ্ধ পদ
সিংহ ও আসন পদ দুইটি প্রত্যেকটি সমস্যমান পদ।
প্রিয় চাকরি প্রত্যাশী ভাই ও বোনেরা আপনাদের সবার জন্য এই পোস্ট টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কেননা ব্যাকরণের প্রতিটি বিষয় জানা দরকার ভালো করে বুঝলে জানলে যেকোন নিয়োগ পরীক্ষায় আসা প্রশ্নের উত্তর দিতে অনেক সহজ হয়।
Also read: শব্দ কি? শব্দ কত প্রকার ও কি কি শব্দ গঠন উদাহরণসহ বাংলা ব্যাকরণ সকল শিক্ষার্থীর জন্য।
সমাসের প্রকারভেদ :
সমাসবদ্ধ পদ গঠিত হয় বিভিন্ন নিয়ম ও পদ্ধতিতে। দুটি পদের দরকার সমাসবদ্ধ পদ গঠনে ।
এই দুটি পদের প্রথম পদটিকে বলা হয় পূর্বপদ ও দ্বিতীয় পদটিকে বলা হয় পরপদ ।
সমাসের প্রকারভেদ :
সমাস সাধারণত ছয় প্রকার
সমাস শিখা জানা অনেক সহজ সমাস শিখতে লাগেনা ছয়মাস ।
- ১. দ্বন্দ্ব সমাস
- ২. কর্মধারয় সমাস
- ৩.তৎপুরুষ সমাস
- ৪. বহুব্রীহি সমাস
- ৫.অব্যয়ীভাব সমাস
- ৬. দ্বিগু সমাস
দ্বন্দ্ব সমাস :
যে সমাসের সমস্যামান পদগুলোর সকলেরই সমাসবদ্ধ পদে প্রাধান্য থাকে তাকে দ্বন্দ্ব সমাস বলে । যেমন :
- মাতা পিতা = মাতা ও পিতা
- ছোটবড় = ছোট ও বড়
- পিতাপুত্র = পিতা ও পুত্র।
কর্মধারয় সমাস:
উদাহরন :
- মহান যে রাজা = মহারাজা ।
- চন্দ্রমুখ = চন্দ্রের ন্যায় মুখ ।
কর্মধারয় সমাস একাধিক হয় যেমন : উপমান কর্মধারয় সমাস
উপমান কর্মধারয় সমাস:
যদি সাধারণ গুনের উল্লেখ থাকে তাকে উপমান কর্মধারয় সমাস বলে। এক্ষেত্রে উপমান পদটি বিশেষ্য এবং গুনবাচক পদটি বিশেষন বলে। যেমন : কাজল কালো = কাজলের ন্যায় কালো ।
উপমিত কর্মধারয় সমাস:
যদি সাধারণ ধর্মের উল্লেখ না থাকে ,দুটো বস্তুর মধ্যে কেবল তুলনায় বুঝায় তাকে উপমিত কর্মধারয় সমাস বলে।
এক্ষেত্রে উপমান এবং উপমেয় পদ দুটি বিশেষ্য হয় ।যেমন : চন্দ্রমুখ = মুখ চন্দ্রের ন্যায়।
রূপক কর্মধারয় সমাস:
যদি উপমান ও উপমেয়ের মধ্যে অভিন্নতা কল্পনা করা হয় তখন তাকে রূপক কর্মধারয় সমাস বলে ।
যেমন : বিষাদসিন্ধু= বিষাদ রূপ সিন্ধু
কর্মধারয় সমাস খুবই সহজ একটু বুঝে বুঝে পড়লে অবশ্যই ভালো করে সমাস জানতে পারবেন।
মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস।
মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস:
Also Read: কারক ও বিভক্তি: এর বৈশিষ্ট্য, প্রকারভেদ ও উদাহরন, কারক ও বিভক্তি নির্ণয়ের সহজ কৌশল
তৎপুরুষ সমাস :
পূর্বপদের দ্বিতীয়া , তৃতীয়া , চতুর্থী, পঞ্চমী ,ষষ্ঠী ,সপ্তমী,বিভক্তির লোপ হয়ে যে সমাস হয় তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে।নিচে তৎপুরুষ সমাসের কিছু
উদাহরন: দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস
- ব্যক্তিকে গত = ব্যক্তিগত।
- মাছকে ধরা = মাছধরা।
- তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস:
- বিদ্যা দ্বারা হীন = বিদ্যাহীন।
- মেঘ দ্বারা আচ্ছন্ন= মেঘাচ্ছন্ন।
- মনদ্বারা গড়া= মনগড়া।
- হাত দ্বারা কাঠা = হাতকাটা।
- চতুর্থী তৎপুরুষ:
চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস সাধারণত নিমিত্তার্থক হয়ে থাকে এ সমাসের ব্যাসবাক্যে জন্য বা নিমিত্ত অনুসর্গটি বর্তমান থাকে।
যেমন:
- বিয়ের জন্য পাগল = বিয়েপাগল।
- রান্নার জন্য ঘর = রান্নাঘর ।
- শিশুর জন্য বিভাগ = শিশুবিভাগ।
- মাপের জন্য কাঠি = মাপকাঠি।
পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস:
পূর্বপদে পঞ্চমী বিভক্তি ( হতে,থেকে ইত্যাদি) লোপ পেয়ে যে তৎপুরুষ সমাস হয় তাকে পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস বলে।
কয়েকটি তৎপুরুষ সমাসের উদাহরণ:
- আগা হতে গোড়া = আগাগোড়া।
- স্কুল হতে পালানো = স্কুলপালানো।
- মেঘহতে মুক্ত= মেঘমুক্ত।
- গাছ থেকে পড়া = গাছপড়া।
ষষ্টী তৎপুরুষ: পূর্বপদের ষষ্টী বিভক্তির( র,এর ) লোপ হয়ে যে সমাস হয় ,তাকে ষষ্টী তৎপুরুষ সমাস বলে।
- পথের রাজা = রাজপথ।
- হাত ঘড়ি = হাতের ঘড়ি ।
- রাজারপুত্র = রাজপুত্র।
- মাতার সম = মাতৃসম।
সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস: পূর্ব পদে সপ্তমী বিভক্তি ( এ, য়,তে) লোপ হয়ে যে সমাস হয় তাকে সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস বলে।
উদাহরণ:
- গাছে পাকা = গাছপাকা
- রাতে কানা = রাত কানা ।
- অকালে মৃত্যু= অকালমৃত্যু।
অলুক তৎপুরুষ সমাস: যে তৎপুরুষ সমাসের পূর্বপদের বিভক্তি লোপ না পেয়ে সমাসবদ্ধ পদ তৈরি হয় তাকে অলুক তৎপুরুষ সমাস বলে।
যেমন :
- কলুরবলদ= কলুরবলদ।
- গায়েহুলুদ = গায়েহলুদ।
- ঘিয়েভাজা = ঘিয়েভাজা
নঞ তৎপুরুষ সমাস:
পূর্বপদে নঞ অব্যয় বসে যে তৎপুরুষ সমাসের ব্যাসবাক্য রচিত হয় তাকে নঞ তৎপুরুষ সমাস বলে
উদাহরন;
- নয়হিসাবী= বেহিসাবী।
- নয় অতি দীর্ঘ= নাতি দীর্ঘ।
উপপদ তৎপুরুষ সমাস:
উপপদের সাথে কৃদন্ত পদের যে সমাস হয় তাকে উপপদ তৎপুরুষ সমাস বলে।
উদাহরন :
- জলে চরে যে= জলচর ।
- স্থলে চলে যে = স্থলচর ।
- পকেট মারে যে = পকেটমার।
বহুব্রীহি সমাস:
যে সমাসের সমাসবদ্ধ পদ সমস্যামান পদগুলোর কোনটি না বুঝিয়ে অন্য কোন পদকে বুঝায় অর্থাৎ অন্য পদের প্রাধান্য থাকে তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে।
উদাহরন :
- দশানন= দশ আনন যার।
- নীলকন্ট = নীল কষ্ট যার।
- নঞ বহুব্রীহি সমাস:
যে বহুব্রীহি সমাসে পূর্বপদে না বোধক অব্যয় থাকে তাকে নঞ বহুব্রীহি সমাস বলে ।
উদাহরন:
- অজ্ঞান = না জ্ঞান যার।
- বেতার = নাই তার যার ।
অব্যয়ীভাব সমাস :
যে সমাসে পূর্বপদে অব্যয় থাকে এবং সমাসবদ্ধ পদে অব্যয়ের প্রাধান্য থাকে থাকে তাকে অব্যয়ীভাব সমাস বলে যেমন :
- দিন দিন = প্রতিদিন
- হায়ার অভাব = বেহায়া
- বনের সমীপে = উপবন।
- আমিষের অভাব = নিরামিষ
দ্বিগু সমাস: যে সমাসে পূর্বপদে সংখ্যাবাচক শব্দ থাকে এবং ব্যাসবাক্যে সমাহার শব্দ থাকে তাকে দ্বিগু সমাস বলে। যেমন;
- শত অব্দের সমাহার = শতাব্দী ।
- চার রাস্তার সমাহার = চৌরাস্তা ।
- ত্রিকাল = ত্রি কালের সমাহার ।
অন্যান্য সমাসগুলো হচ্ছে ,
- নিত্য সমাস ,
- প্রাদি সমাস
- সুপসুপা সমাস ।
প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা এই ছিল আপনাদের জন্য সমাস নিয়ে আমাদের বিশেষ আয়োজন কেননা ব্যকরনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় সমাস সমাস জানলে জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে আপনি সমাস নিয়ে যেকোন প্রশ্ন যেকোন নিয়োগ পরীক্ষায় আসলে অবশ্যই আপনি আপনারা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন । এছাড়াও আমাদের ব্লগে পদ ,শব্দ, ব্যকরন ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে শেয়ার করা হয়েছে আপনারা চাইলে শেয়ার করবেন।