ব্যাংক এশিয়া একাউন্ট খোলার নিয়ম: একটি ব্যাংক একাউন্ট থাকা বর্তমানে অনেক ক্ষেত্রেই অপরিহার্য একটি ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যাংক একাউন্ট খোলা বেশ সহজ একটি কাজ। প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট থাকলে কোন রকম ঝামেলা ছাড়াই আপনি একটি ব্যাংক একাউন্ট এর মালিক হতে পারেন। কিন্তু এই সম্পর্কে আমাদের সঠিক তথ্য জানা না থাকার কারণে প্রায়ই আমরা সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকি। আমাদের লেখাটি পড়ার পর আপনি খুব সহজেই কোন ঝামেলা ছাড়া যে কোন ধরণের ব্যাংক একাউন্ট খোলতে পারবেন।
ব্যাংক এশিয়া একাউন্ট খোলার নিয়ম ২০২২
*একাউন্ট খোলার নিয়ম: বাংলাদেশের আরও অন্যান্য যে সমস্ত ব্যাংক একাউন্ট রয়েছে, সে সব ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম এবং ব্যাংক এশিয়ার একাউন্ট খোলার নিয়ম মোটামুটি একই রকম।
ব্যাংক এশিয়াতে মোট চার(৪) ধরণের একাউন্ট করা যায় এবং সেই সকল একাউন্ট করতে প্রয়োজনীয় কি কি কাগজপত্র লাগবে তা নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।
১| সেভিংস একাউন্ট: সঞ্চয়ী হিসাব সাধারণত প্রথম ব্যাংক একাউন্ট যা কেউ ভবিষ্যতের জন্য অর্থ জমা রাখতে এবং সম্পদ তৈরি এবং সংরক্ষণের জন্য খোলে থাকে। সঞ্চয় এর সংস্কৃতি গড়ে তুলার জন্য শিশুরা অভিভাবকের সাথে সঞ্চয়ী একাউন্ট খোলতে পারে। কিশোর-কিশোরীরা ঘরের কাজ, টিউশন বা চাকরি থেকে উপার্জিত অর্থ রাখার জন্য সঞ্চয়ী হিসাব খোলে থাকে। এতে করে অল্প অল্প করে অনেক টাকা জমা হয়। যা ভবিষ্যতে বড় কিছু করার জন্য কাজে লাগে। সেভিংস একাউন্ট এর সুবিধা রয়েছে। এই একাউন্ট খোলা এবং অ্যাক্সেস করা সহজ এবং FDIC বীমা এবং নিরাপত্তা রয়েছে।
ব্যাংক এশিয়া সেভিংস একাউন্ট খোলার নিয়ম
# সেভিংস একাউন্ট খোলার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
ক) নিজের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি এক ১ কপি।
( জাতীয় পরিচয়পত্রের দুই দিকের স্পষ্ট ফটোকপি করতে হবে। স্পষ্ট না হলে বা পরিচয়পত্রের নম্বর ক্লিয়ার না দেখা গেলে একাউন্ট খোলা সম্ভব হবে না)
খ) সদ্য তুলা নিজের দুই ২ কপি রঙিন ছবি।
(ছবিতে নিজের চেহারা স্পষ্ট বোঝা যেতে হবে)
গ) নমিনীর জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি এক(১) কপি।
(নমিনী দেয়ার ক্ষেত্রে পরিবারে বিশ্বস্ত কাউকে দিবেন, তা না হলে ভবিষ্যতে ঝামেলার সৃষ্টি হওয়ার সম্ভবনা থাকে, এই বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে)
ঘ) নমিনীর সদ্য তুলা রঙিন ছবি এক(১) কপি।
( ছবিতে নমিনীর চেহারা স্পষ্ট থাকতে হবে)
ব্যাংক এশিয়া স্টুডেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম
২| স্টুডেন্ট একাউন্ট: স্টুডেন্ট একাউন্ট এর অনেক সুযোগ সুবিধা রেয়েছে। প্রাথমিকভাবে একশত (১০০) টাকা জমা দিয়েই একাউন্ট খুলতে পারবেন। সরকারি শুল্ক ও কর ছাড়া কোন চার্জ দিতে হবে না। প্রাথমিকভাবে ফ্রি এটিএম কার্ড পাবেন এবং এটার মেয়াদ পাঁচ(৫) বছর। পাঁচ(৫) বছর পরে দুইশত ত্রিশ(২৩০) টাকা দিয়ে কার্ড নবায়ন করে নিতে পারবেন। একটি চেকবই পাবেন। ইন্টারনেট ব্যাংকিং এর মাধ্যমে যে কোন সময় যে কোন স্থান থেকে মোবাইল রিচার্য এবং ফান্ড ট্রান্সফারের বিশেষ সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন।
# স্টুডেন্ট একাউন্ট খোলার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
ক) জন্মসনদের ফটোকপি এক(১) কপি।
( জন্মসনদের স্পষ্ট ফটোকপি থাকতে হবে। জন্মসনদ অবশ্যই ডিজিটাল হতে হবে অর্থাৎ যেটা অনলাইনে পাওয়া যায়)
খ) মাদ্রাসা/স্কুল/কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ের ID কার্ড এর ফটোকপি এক(১) কপি।
( বর্তমানে যেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যায়নরত আছো সেই প্রতিষ্ঠানের কর্তৃক দেয়া পরিচয়পত্র)
গ) অভিভাবকের জাতীয়পরিচয় পত্রের ফটোকপি দুই(২) কপি।
(জাতীয় পরিচয়পত্রের দুই দিকের স্পষ্ট ফটোকপি হতে হবে, স্পষ্ট না হলে বা পরিচয়পত্রের নম্বর স্পষ্ট বুঝা না গেলে একাউন্ট খোলতে সমস্যা হবে)
ঘ) নিজের সদ্য তু্লা দুই(২) কপি রঙিন ছবি।
( ছবিতে চেহারা স্পষ্ট বুঝা যেতে হবে)
ঙ) নমিনীর জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি (২) কপি।
( নমিনী দেয়ার ক্ষেত্রে পরিবারের বিশ্বস্ত কাউকে দিবেন, তা না হলে ভবিষ্যতে ঝামেলার সৃষ্টি হওয়ার সম্ভব না থাকে কাজেই এই বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে)
চ) নমিনীর সদ্য তুলা এক(১) কপি রঙিন ছবি।
( ছবিতে চেহারা স্পষ্ট বুঝা যেতে হবে)
ব্যাংক এশিয়া কারেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম
৩| কারেন্ট একাউন্ট: চলতি হিসাব বলতে কোন ব্যাংক অথবা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জমা হিসাবকে বোঝায়। যে হিসাবের মাধ্যমে ব্যাংক তার গ্রাহককে চাহিবার মাত্র আমানতকৃত অর্থ উত্তোলনের সুযোগ প্রদান করে থাকে বলে তাকে চলতি হিসাব বলে। একে চাহিদা আমানত(Demand deposit) বা চেক হিসাব(Cheque account) ইত্যাদি নামেও অভিহিত করা হয়। এই হিসাবের বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে, নিম্নে কিছু বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলো-
* ব্যাংকিং সময়ে চলতি হিসাবে যতবার খুশি অর্থ উত্তোলন ও জমা করা যায়।
* কেন্দ্রীয় ব্যাংক এর পক্ষ থেকে নূন্যতম জমার কোন হিসাব নির্ধারণ নেই তবে এক(১) থেকে দশ(১০) হাজার টাকা জমা দুয়ে চলতি হিসাব (Current account) খোলা যায়।
* ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সাথে পূর্ব আলোচনা সাপেক্ষে চলতি হিসাব থেকে ব্যাংক জমার অধিক পরিমাণ অর্থ উত্তোলন করা যায়। একে জমাতিরিক্ত ঋণ (Overdraft) বলে।
# কারেন্ট একাউন্ট খোলার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
ক) জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি এক(১) কপি। ( জাতীয় পরিচয়পত্রলর দুই দিকের স্পষ্ট ফটোকপি হতে হবে। স্পষ্ট না হলে বা পরিচয়পত্রের নম্বর স্পষ্ট দেখা না গেলে একাউন্ট খোলা সম্ভব নয়)
খ) নিজের সদ্যতুলা রঙিন ছবি এক(১) কপি। ( ছবিতে চেহারা স্পষ্ট বুঝা যেতে হবে)
গ) ট্রেড লাইসেন্স এর ফটোকপি এক(১) কপি। ( ট্রেড লাইসেন্স এর নম্বর স্পষ্ট দেখা যেতে হবে)
ঘ) নমিনীর জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি এক(১) কপি। ( নমিনী দেয়ার ক্ষেত্রে পরিবারের বিশ্বস্ত কাউকে দিবেন, না হলে ভবিষ্যতে ঝামেলা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভবনা থাকে কাজেই এই বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে)
ব্যাংক এশিয়া ডিপিএস একাউন্ট খোলার নিয়ম
৪| ডিপিএস একাউন্ট: ব্যাংক এশিয়ার ডিপিএস একাউন্টের বেশ কিছু সুবিধা দিয়ে থাকে, নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
* টাকা জমানোর ক্ষেত্রে আপনি অনেক ভালো রকমের ইন্টারেস্ট রেট উপভোগ করতে পারবেন।
* এছাড়াও টাকা জমানোর ক্ষেত্রে কোন প্রকার গোপন চার্জ প্রযোজ্য হবে না।
* SOD লোন এর সুযোগ্ সুবিধা উপভোগ করা যাবে।
* টাকা জমা দেয়ার ক্ষেত্রে কোন প্রকার অনলাইন চার্জ প্রযোজ্য হবে না। অর্থাৎ মাসিক সঞ্চয় সময় অনলাইন চার্জ বাবদ কোন টাকা খরচ করা হবে না।
* এছাড়াও কাস্টমার চার্জ ফ্রি সেভিংস একাউন্ট এর সুবিধা উপভোগ করা যাবে।
* আপনি চাইলে ৩,৫,৭,১০ এবং সর্বোচ্চ ১২ বছরের জন্য টাকা জমা করতে পারবেন।
* সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা মাসে সঞ্চয় করতে পারবেন।
পরিশেষে বলা যায় যে, ব্যাংক এশিয়া ডিপিএস সিস্টেমে রয়েছে অনেক ধরণের সুযোগ সুবিধা এবং আপনার পছন্দ অনুযায়ী নিন্ম পরিমাণ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ টাকা এখানে জমা দিতে পারবেন। গতবে আপনি যদি টাকা জমা রাখার সময়সীমা বা সঞ্চয় করার সময়সীমা বৃদ্ধি করেন, তাহলে ডিপিএস একাউন্ট এর মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে আপনি বেশি সুযোগ সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন।
# ডিপিএস একাউন্ট খোলার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
ক) জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি এক(১) কপি।
( জাতীয় পরিচয়পত্রের দুই দিকের স্পষ্ট ফটোকপি হতে হবে, পরিচয়পত্রের নম্বর স্পষ্ট দেখা না গেলে একাউন্ট খোলা সম্ভব নয়)
খ) নিজের সদ্য তুলা রঙিন ছবি দুই(২) কপি। ( ছবিতে চেহার স্পষ্ট দেখা যেতে হবে)
গ) নমিনীর জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি এক(১) কপি।
( নমিনী দেয়ার ক্ষেত্রে পরিবারের বিশ্বস্ত কাউকে দিবেন, না হলে ভবিষ্যতে ঝামেলা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভব না থেকে যায়)
ঘ) নমিনীর সদ্য তুলা রঙিন ছবি এক(১) কপি।
( ছবিতে চেহারা স্পষ্ট বুঝা যেতে হবে)
* এবার উপরে উল্লেখিত সকল ডকুমেন্টসসহ আপনার নিকটস্থ ব্যাংক এশিয়ার শাখায় যোগাযোগ করুন। ব্যাংকে কর্মরত দায়িত্বশীল কর্মকর্তাগণ আপনার একাউন্ট খোলার জন্য যাবতীয় কাজ এবং নির্দেশনা দিয়ে থাকবেন এবং অনেক সহজেই আপনি ব্যাংক এশিয়ায় একাউন্ট খোলে নিতে পারবেন।
* একাউন্ট খোলার পরে কর্মকর্তার সাথে কথা বলে একটি এটিএম কার্ড এবং একটি চেক বই নিয়ে নিবে( যেহেতু এটিএম কার্ড এবং চেকবই তৈরি করতে সময়ের প্রয়োজন তাই এটা সাধারণত এক (১) দিন পরেই দেয়া হয়।
এশিয়া ব্যাংক অফিসিয়াল ওয়েবসাইট : ভিজিট করুন
বাংলাদেশের অন্যান্য ব্যাংকে একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে নিচের পোস্ট গুলোতে ভিজিট করুন।